পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৭৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

আচ্ছা এইবার উপরো-উপরি গোটা তিনেক শক্তি-শেল ছাড়ি, দেখি মনে পৌঁছয় কি না?

“জিমুনা গো মুঞি জিমুনা—”

মন যে হরিণের মতো এগিয়ে আসছে! তাহলে সুর সন্ধান করা যাক্ মন দিয়ে এইবারে—

“মনের মরম কথা,  তোমারে কহিয়ে এথা
শুণ শুণ পরাণের সই।
স্বপনে দেখিকু যে  শ্যামল বরণ দে
তাহা বিনু আর কারু নই৷”

এইবার মন কি বলছে শুনতে পাচ্ছ কি?

“রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে ঘন ভোর
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।”

এইবার নিজের মনকে ফিরে ডাক, এই উত্তর পাও কি না বল—

“রূপের পাথারে আঁখি ডুবি সে রহিল
যউবনের বনে মন হারাইয়া গেল।
ঘরে যাইতে পথ মোর হৈল অফুরান
অন্তরে বিদরে হিয়া কি জানি করে প্রাণ।”

 মুখে বলে’ যাওয়া আর মনের সঙ্গে বলে যাওয়া কথায় লেখায় চলায় ফেরায় অনেকখানি ধরণ ধারণ সমস্ত দিক দিয়েই যে তফাৎ হয় তা কে না বলবে! মন যে রচনাকে ফাঁকি দিয়ে গেল, তাকে খুব সব জমকালো বাক্য মন্ত্র মধ্যম তার স্বর অথবা বং চং ঢং ঢাং শব্দকোষ অলঙ্কার ব্যাকরণ ইত্যাদির কৃত্রিম উপায়গুলো দিয়ে খানিক চালানো যেতে পারে না যে তা নয়, কিন্তু রঙীণ কাগজে প্রস্তুত খেলানা প্রজাপতির মত খানিক উড়েই ঝুপ করে পড়ে’ যায়। এই যে কবিতাটা হচ্ছে ‘করুণাময়ীর গালবাদ্য’, নাম শুনেই মনে হয় এতে অনেকখানি সুর তাল ইত্যাদি পাওয়া যাবে; কবিতাটা আরম্ভ হলো ঐ ভাবে—‘গালবাদ্য ঘন ঘন’ কিন্তু এইটুকু বলেই কবি আন্-মন হলেন, বাক্যশক্তি হারালেন, সুরের তার যেন পটাং করে ছিঁড়ে গেল, শোন,—“গালবাদ্য ঘন ঘন সজল-লোচন।” কোথায়