পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

হয় প্রথমে, তারপর বসে থাকা—বিশ্বের চলাচলের পথের ধারে নিজের আসন নিজে বিছিয়ে, চুপটি করে নয়—সজাগ হয়ে। এই সজাগ সাধনার গোড়ায় শ্রান্তিকে বরণ করতে হয়—Art is not a pleasure trip, it is a battle, a mill that grinds. (Millet).

 Art has been pursuing the chimera attempting to reconcile two opposites, the most slavish fidelity to nature and the most absolute independence, so absolute that the work of art may claim to be a creation. (Bracquemont). আমাদেরও পণ্ডিতেরা artকে ‘নিয়তিকৃত নিয়মরহিতা’ বলেছেন; সুতরাং এই artকে পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারখানা দেওয়ালের মধ্যে যে ধরে দিয়ে যাব, এমন আশা আমি করিনে এবং আমাকে যিনি এখানে ডেকেছেন, তিনিও করেন না। আমি ক-বছর নির্বিবাদে art-সম্বন্ধে যা খুসি, যখন খুসি, যেমন করে খুসি, যা-তা—অবিশ্যি যা জানি তা—বকে যেতে পারবো এই ভরসা পেয়েছি। আমার পক্ষে সেইটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু আমার যথেষ্ট হলেই তো হল না, আরো পাঁচজন রয়েছেন—দেশের ও দশের কি হল? এ প্রশ্ন তো উঠবে একদিন, তাই আমি এই কাজের দিকে দু পা এগোই, দশ পা পিছোই, আর ভাবি এই যে এতকাল ধরে নানা ছবি আঁকলেম, ছবি আঁকতে শিখিয়ে চল্লেম, স্কুল বসালেম এবং বারো-তেরো বছর ধরে কত Exhibitionই দেখালেম লোকসমাজে, এই যে নবচিত্রকলাপদ্ধতি বলে একটা অদ্ভুত জিনিষ, এই যে প্রাচীন ভারতচিত্র বলে একটা গুপ্তধনের সন্ধান দেওয়া গেল, আর আগেকার সাদা মাসিকপত্রগুলোকে সচিত্র করে, ছেলেদের বইগুলোকে রঙিন ছবিতে ভরিয়ে সমালোচকদের হাতে “ন ভূত ন ভবিষ্যতি” সমালোচনা গড়বার মহাস্ত্র আরও একটা বাড়িয়ে তোলা হল—এগুলো বিনা পারিশ্রমিকে দেওয়া বলেই কি যথেষ্ট হল না? বিনামূল্যে, আনন্দে একটু দেওয়া, সেই তো ভাল দেওয়া। মূল্য নিয়ে ওজন করে যা দেওয়া, সেটা দোকানদারের ফাঁকি দিয়ে ভরা হলেই যে যথেষ্ট ভাল হয় তাতো নয়! তাই বলি—আমি বলে যাব, তোমরা শুনে যাবে; আমি ছবি লিখে যাব, তোমরা দেখে আনন্দ করবে অথবা সমালোচনা করবে; কিম্বা তোমরা লিখবে বলবে, আমি দেখব শুনব আনন্দ করবো—