পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৮৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পের সচলতা ও অচলতা
৭৭

নানা অঙ্গভঙ্গি সুরু করে দেয় তবে তাকে নটরাজ বলে’ ডাকে কেউ! অভিনেত্রী বেশ তাল লয় সুর দিয়ে কেঁদে চলেছে, হঠাৎ উপরের বক্স থেকে আবেগভরে ছেলে-কাঁদা ও ঘুম-পাড়ানো সুরু হলো, তার বেলায় শ্রোতারা ধমকে ওঠে কেন ছেলেকে ও ছেলের মাকে? মনের আবেগ তো যথেষ্ট সেখানে ভাষায় প্রকাশ হচ্ছিল কিন্তু বলে তো চল্লো না সেটা! তবেই দেখ শিল্পের অনুকূল আর তার প্রতিকূল এই দুই রকম মনের পরশ রয়েছে। মালি যেমন বেছে বেছে ফুল নেয়, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফুলের তোড়া ফুলের হার গাঁথে, শিল্পীর মনের পরশ ঠিক সেইভাবে কায করে যায় বাক্য রং রেখা ভঙ্গি ইত্যাদিকে ভাবের সূত্রে ধরে’ ধরে’। নিছক আবেগের উচ্ছৃঙ্খলতা আছে, সংযম নির্বাচন এসব নেই। ছেলে কাঁদার ঠিক উল্টো যে পাকা নটীর কান্নার সুর কৃত্রিম সুরে হলেও সেটা মনোরম হয় শিল্পীর বর্ণন ভঙ্গি নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে। বাষ্পের মতো শুধু খানিক আবেগের সঞ্চয় নিয়ে ছবি বল আর লেখাই বল শিল্প বলে’ যে চলে না তার নমুনা এই—

“কত আর সুখে মুখ দেখিবে দর্পণে,
এ মুখের পরিণাম বারেক না ভাব মনে! 

শ্যাম কেশ পক্ব হবে,
ক্রমে সব দন্ত যাবে,
গলিত কপোল কণ্ঠ হবে কিছুদিনে; 
লোল চর্ম্ম কদাকার
কফ কাশ দুর্নিবার,
হস্ত পদ শিরঃকম্প ভ্রান্তি ক্ষণে ক্ষণে।” 

এর জুড়ি মূর্তি কতকটা সেই গান্ধারের কঙ্কালসার বুদ্ধ। জীবনকে কুশ্রী আর দীনতা দিয়ে যে শিল্পী নয় কবিও নয় তার ভাবা বিকট রকমে বীভৎসরূপে দেখালো। যাকে বলে inartistic reality তাই, এইবার যিনি কবি তিনি কি সুন্দর করে বল্লেন ঐ কথাটাই দেখ, এও reality কিন্তু কুশ্রী নয়, artistic reality যাকে বলে তাই—

“মন তুমি কি রঙ্গে আছ, ভোলা মন, রঙ্গে আছ রঙ্গে আছ,
তোমার ক্ষণে ক্ষণে ঘোরা ফেরা, দুঃখে রোদন সুখে নাচ।