পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৮৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পের সচলতা ও অচলতা
৭৯

শিশির-ফোঁটা, কত কি! মৃত্যু, সেও বলে আমি চলেছি আর ফিরবো না, গভীর সান্ত্বনা আমি, নিদারুণ আমি, সকরুণ আমি। ফুলের সঙ্গে ফুলদানীটাও যদি কথা না কইতো তবে কি তারা মানুষের মনে ধরতো? নির্বাক যে সেও ইঙ্গিতে বলে—আমি বলতে পারছিনে মন কি করছে! অবোধ যারা তারাই কেবল বাক্য থেকে বিচ্ছিন্ন এক অদ্ভূত আর্টের কল্পনাজাল বুনে বুনে নিজেকে ও নিজের শিল্পকে গুটির মধ্যে গুটিপোকার মতো বদ্ধ করে রাখতে চায়। শিল্প যে আনন্দ দেয় সেই আনন্দই তার ভাষা—আনন্দ-কাকলী আনন্দের দোলা—

“কি আনন্দ, কি আনন্দ, কি আনন্দ!
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ।”

 মহাশূন্য, তার নিজের বাক্য দিয়ে সেও পরিপূর্ণ রয়েছে! বাক্যকে ছেড়ে চলতে পারে কি! বেদের বাগ্দেবীর উক্তি কি মহিমা নিয়ে অভ্রভেদী একটি মূর্তির মতো আপনাকে প্রকাশ করেছে দেখ—“আদিত্যগণ বিশ্বদেবতাগণ রুদ্রগণ এবং বসুগণের সহিত আমি বিচরণ করিতেছি। মিত্রাবরুণ, ইন্দ্র ও অগ্নি এবং অশ্বীদ্বয়কে আমি ধারণ করি। প্রস্তরাঘাত হইতে উৎপন্ন যে সোমরস তাহাকে তষ্টাকে পুষণকে ভাগকে আমি ধারণ করি……যজ্ঞোপযোগী উপকরণ-সমূহের মধ্যে প্রথমা আমি।…এতাদৃশা আমাকে দেবতারা নানাস্থানে সন্নিবেশিত করিয়াছেন, অপরিমেয় আমার আশ্রয়স্থানে তাবৎ প্রাণিগণের মধ্যে আমি আবিষ্ট আছি।……যিনি দর্শন করেন প্রাণ ধারণ করেন কথা শ্রবণ করেন তিনি আমারই সহায়তাতে সেই সকল কার্য করেন……আমি দ্যুলোকে ও ভূলোকে আবিষ্ট হইয়া আছি……আমি আকাশকে প্রসব করিয়াছি…সমুদ্রের জলের মধ্যে আমার স্থান, সেই স্থান হইতে সকল ভুবনে বিস্তারিত হই; আপনার উন্নত দেহ দ্বারা এই দ্যুলোককে আমি স্পর্শ করি। আমিই তাবৎ ভুবন নির্মাণ করিতে করিতে বায়ুর ন্যায় বহমান হই। আমার মহিমা বৃহৎ হইয়া দ্যুলোককেও অতিক্রম করিয়াছে পৃথিবীকেও অতিক্রম করিয়াছে…॥”

 বিরাট এই বিশ্বচরাচর, যার প্রাণী বিশাল, অতি বৃহৎ যার রূপ, তার এই মূর্তি! অতি পুরাতন ঈজিপ্টের ভাস্কর কঠিন প্রস্তরে যে বিরাটত্ব আর বিশালত্ব দিয়ে আপনার দেবদেবীর মহিমা কীর্তন করেছে