পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৯৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সৌন্দর্যের সন্ধান
৮৯

নেওয়া স্বাভাবিক যে চুম্বক যেমন ঘড়ির কাঁটাকে দক্ষিণ থেকে পরে পরে সম্পূর্ণ উত্তরে নিয়ে যায় তেমনি সুন্দরের টান মানুষের মনকে ক্ষণিক ঐহিক নৈতিক এমনি নানা সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে মহাসুন্দরের দিকেই নিয়ে চলে, আর অসুন্দরের প্রভাব সেও মানুষের মনকে আর এক ভাবে টানতে টানতে নিয়ে চলে কদর্যতার দিকেই। কিন্তু সত্যিকার একটা কাঁটা আর চুম্বক নিয়ে যদি এই সত্যটা পরীক্ষা করতে বসা যায় তবে দেখবো সুন্দরের একটা চিহ্ন দিয়ে তারি কাছে যদি চুম্বকের টানের মুখ রাখা যায় তবে কাঁটা সোজা সুন্দরে গিয়ে ঠেকবে নিজের ঘর থেকে, আবার ঐ চুম্বকের মুখ যদি অসুন্দর চিহ্ন দিয়ে সেখানে রাখা যায় তবে ও কাঁটা উল্টো রাস্তা ধরেই ঠিক অসুন্দরে গিয়ে না ঠেকে পারে না। কিন্তু এমন তো হয় যে, আমি যদি মনে করি তবে অসুন্দরের গ্রাস থেকেও কাঁটাকে আরো খানিক টেনে সুন্দরের কাছে পৌঁছে দিতে পারি কিম্বা সুন্দরের দিক থেকে অসুন্দরে নামিয়ে দিতে পারি! সুতরাং সুন্দর অসুন্দরের মধ্যে কোন্‌টাতে আমাদের দৃষ্টি ও সৃষ্টি সমুদয় গিয়ে দাঁড়াবে তার নির্দেশ কর্তা হচ্ছে আমাদের মন ও মনের ইচ্ছা। মনে হ’ল তো সুন্দরে গিয়ে লাগলেম, মনে হ’লতো অসুন্দরে গিয়ে পড়লেম কিম্বা সুন্দর থেকে অসুন্দর অসুন্দর থেকে সুন্দরে দৌড় দিলেম, মন ও মনের শক্তি হল এ বিষয়ে নিয়ন্তা। টানে ধরলে যে চুম্বক ধরেছে তার মনের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রয়োজন না রেখেই কাঁটা আপনিই তার চরম গতি পায়, কিন্তু এই গতিকে সংযত করে’ অধোগতি থেকে ঊর্ধ্ব বা ঊর্ধ্ব থেকে অধোভাবের দিকে আনতে হলে আমাদের মনের একটা ইচ্ছাশক্তি একান্ত দরকার। বিল্বমঙ্গল বারবনিতার প্রেমোন্মাদ থেকে বিভুর প্রেমোন্মাদে গিয়ে যে ঠেকলেন সে শুধু তাঁর মনটি শক্তিমান ছিল বলেই। নিকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টে, অসুন্দর থেকে সুন্দরে যেতে সেই পারে যার মন উৎকৃষ্ট ও সুন্দর, যার মন অসুন্দর সেও এই ভাবে চলে ভাল থেকে মন্দে। আর্টিষ্ট কবি ভক্ত এঁদের মন এমনিই শক্তিমান যে অসুন্দরের মধ্য দিয়ে সুন্দরের আবিষ্কার তাঁদের পক্ষে সহজ। ভক্ত কবি আর্টিষ্ট সবাই এক ধরণের মানুষ; সবাই আর্টিষ্ট, আর্টিষ্টের কাছে ভেদ নেই পণ্ডিতের কাছে যেমন সেটা আছে। আর্টিষ্টের কাছে রসের ভেদ আছে, মনের