পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৯৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

একটি জাল বুনে নেওয়া যে চলে না তা নয়, কিন্তু তাতে করে’ সুন্দরকে ঠিক যে ধরা যায় তার আশা আমি দিতে সাহস করি না; তবে আমি এই টুকু বলি—অন্যের কাছে সুন্দর কি বলে’ আপনাকে সপ্রমাণিত করছে তা আমাদের দেখায় লাভ কি? আমাদের নিজের নিজের কাছে সুন্দর কি বলে’ আসছে তাই আমি দেখবো। আমি জানি সুন্দর সব সময়ে সুখও দেয় না কাযও দেয় না—বিদ্যুৎ-শিখার মত বিশৃঙ্খল অসংযত উদেশ্যহীন বিদ্রুত বিষম এবং বিচিত্র আবির্ভাব সুন্দরের! সুন্দর, এই কথাই তো বলছে আমাদের—আমি এ নই তা নই, এজন্যে সুন্দর ওজন্যে সুন্দর নই, আমি সুন্দর তাই আমি সুন্দর। আর্টের মধ্যে রীতিনীতি, চক্ষু-জোড়ানো মন-ওড়ানো প্রাণ-ভোলানো ও কাঁদানো গুণ, কিম্বা এর যে কোন একটা যেমন আর্ট নয়, আর্ট বলেই যেমন সে আর্ট, সুন্দরও তেমনি সুন্দর বলেই সুন্দর। সুন্দর নিত্য ও অমূর্ত, নানা বস্তু নানা ভাবের মধ্যে তার অধিষ্ঠান ও আরোপ হলে তবে মনোরসনা তার স্বাদ অনুভব করে—এমন সুন্দর তেমন সুন্দর সুখদ সুন্দর সুপরিমিত সুন্দর সুশৃঙ্খলিত সুন্দর! আমাদের জিব যেমন চাখে মেঠাই সন্দেশ সরবৎ ইত্যাদি পৃথক পৃথক জিনিষের মধ্য দিয়ে মিষ্টতাকে—ঠিক সেই ভাবেই জীব বা জীবাত্মা মনোরসনার সাহায্যে আপনার মধ্যে সুন্দরের জন্য যে প্রকাণ্ড পিপাসা রয়েছে সেটা নানা বস্তু ধরে’ মেটাতে চলে। অতএব বলতে হয়, মন যার যেমনটা চায় সেইভাবে সুন্দরকে পাওয়াই হ’ল পাওয়া, আর কারু কথা মতো কিম্বা অন্য কারু মনের মতো সুন্দরকে পাওয়ার মানে—না পাওয়াই। মা-বাপের মনের মতো হলেই বৌ সুন্দর হল একথা যে ছেলের একটু মাত্র সৌন্দর্য জ্ঞান হয়েছে সে মনে করে না। বৌ কাযের, বৌ সংসারী, বৌ বেশ সংস্থানসম্পন্না, এবং হয়তো বা ডাক-সাইটে সুন্দরীও হতে পারে অন্য সবার কাছে, কিন্তু ছেলের নিজের মনের মধ্যে কায কর্ম সংসার সুরূপ কুরূপ ইত্যাদির একটা যে ধারণা তার সঙ্গে অন্যের পছন্দ করা বৌ মিল্লো তো গোল নেই, না হলেই মুস্কিল। হিন্দিতে প্রবাদ আছে 'আপ্ রুচি খানা—পর রুচি পহেরনা’, খাবারের স্বাদ আমাদের প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ভাবে নিতে হয় সুতরাং সেখানে আমাদের স্বরাজ, কিন্তু পরণের বেলায় পরে যেটা দেখে’ সুন্দর বলে সেইটেই মেনে চলতে