পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/১৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

 কীটভূক্‌ এই পাখী আমাদের বাগানের ফলমূল ও শাকসব্‌জীর অনিষ্টকর অনেক কীটপতঙ্গ দ্বারা উদরপূর্ত্তি করিয়া উদ্ভিদের নিরাপদে বৃদ্ধির সহায়তা করে। সুতরাং ইহার একটা ইকনমিক বা অর্থনৈতিক মূল্য আছে। ইহাকে বন্দী করা, নির্য্যাতন করা কিংবা ধ্বংস করার চেষ্টা মানুষের স্বার্থের প্রতিকূল।

 সকাল-সন্ধ্যা কুটীর-পার্শ্ব হইতে যে আমাদের কর্ণে সুরধারা বর্ষিত করে তাহাকে খাঁচায় পুরিবার চেষ্টা না করাই ভাল। সাধারণতঃ কীটভুক্‌ পাখীকে খাঁচা-বন্দী করিয়া বাঁচানো যায় না। শামা কীটভুক পাখী হওয়া সত্ত্বেও খাঁচায় নিজেকে মানাইয়া লয়, কণ্ঠমাধুর্য্য তাহার নষ্ট হয় না। কিন্তু উচ্চবৃক্ষের অগ্রভাগে বসিয়া যাহার গান গাওয়া স্বভাব, খাঁচার সঙ্কীর্ণ পরিসরের মধ্যে তাহার গান স্বতঃস্ফূর্ত্ত হইতে পারে না। বোধ হয় সেই কারণেই পক্ষিপালকদের মধ্যে একে বন্দী করিয়া রাখিবার রেওয়াজ কম।

 লোকালয়-বাসী এই পাখী মনুষ্যাবাসের কাছাকাছিই নিজ শাবকোৎপাদন কার্য্য সম্পন্ন কর। সুতরাং পাঠক ইচ্ছা করিলে ইহার নীড়-রচনা প্রভৃতি কার্য্য অনায়াসে লক্ষ্য করিতে পারেন। দেয়ালের গর্ত্তমধ্যে, বৃক্ষ-কোটরে বা চালের নীচে এরা বাসা রচনা করে। শুষ্ক তৃণ,সূক্ষ্ম শিকড়, তন্তু, পাখীর পালক প্রভৃতি দ্বারা গহ্বরের অভ্যন্তর আস্তৃত করিয়া তদুপরি ডিম্বরক্ষা করে। প্রায় ক্ষেত্রেই চার-পাঁচটি ডিম একটি বাসায় দেখা যায়। ডিমগুলির রং সবুজাভ শ্বেত; কদাচিৎ সবুজাভ হালকা নীল, রক্তাভ চিহ্ন-সমন্বিত। একজোড়া দোয়েল একবার যেখানে বাসা রচনা করে, প্রায়শঃ দেখা যায় প্রতি বৎসর তারা সেইখানেই ফিরিয়া আসিয়া সেই কোটরটি ব্যবহার করে—অন্য ঋতুতে আহার অন্বেষণে তাহারা যতদূরেই যাক। অবশ্য গ্রাম ছাড়িয়া তাহারা যায় না, কেন না ইহারা যাযাবর নহে।