পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/২১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

সহসা কেহ বিদেশ হইতে বুলবুল আনয়ন করিয়া ছাড়িয়া দেন এবং গত চার-পাঁচ শত বৎসরে সারা দেশকে সে ছাইয়া ফেলিয়াছে। বাহান্ন-তিপান্ন রকমের বুলবুল ভারতবর্ষে বাস করে, সুতরাং ওরূপ দাবী কেহ করিতে পারে না। সুতরাং এই পাখী নিশ্চয়ই কালিদাসের সময়েও ছিল—কিন্তু কালিদাসের সাহিত্যে তাহার নাম নাই কেন? থাকিলেও কি নামে আছে? শ্রীযুক্ত সত্যচরণ লাহা মহাশয় কালিদাসের সাহিত্য তন্ন তন্ন করিয়া ঘাঁটিয়া তন্মধ্যে যতগুলি পাখীর নাম পাওয়া যায় তাহার ফিরিস্তি করিয়া উহাদের আধুনিক পরিচয় দিতে চেষ্টা করিয়াছেন। কিন্তু তিনিও সংস্কৃত সাহিত্যে বুলবুলকে আবিষ্কার করিতে পারেন নাই। এতখানি যুক্তির জঞ্জাল সৃষ্টি করিতে হইল এই জন্য যে আমার মতে এই পাখীর নামের বানান বাংলায় “শ্যামা” না হইয়া “শামা” হওয়া উচিত।

 শামার দেহে বর্ণসমাবেশ অনেকটা দোয়েলের মত। ইহার মাথা, গলা, ঘাড়, পিঠ ও বুক চিকণ কালো। দেহের নিম্নভাগ দোয়েলের যেখানে সাদা, ইহাদের সেখানে উজ্জ্বল খয়ের বর্ণ—ইংরাজীতে যাহাকে বলে চেষ্টনাট। জঙ্ঘা দুটি সাদা। দেহের উপর দিকে পুচ্ছটি যেখানে আরম্ভ হইয়াছে সেখানটা ও তাহারই নিম্নদিকে, অর্থাৎ বস্তি-প্রদেশ, ফেনশুভ্র। উত্তেজিত হইলে উপরদিকের হ্রস্ব শুভ্র পালকগুলি ফুলিয়া খুব সুন্দর দেখায়। ডানার পালকগুলি ঘন বাদামী। শামার পুচ্ছটি শুধু দেখিতে সুশ্রী নয়, ইহার দেহের একটা বিশেষ অঙ্গ, কেননা আসল শরীর অপেক্ষা পুচ্ছটি দীর্ঘ এবং দোয়েলের মতই ক্ষণে ক্ষণে ইহাকে উর্দ্ধে উৎক্ষিপ্ত করিয়া মিলিটারী ভঙ্গী করা ইহারও স্বভাব। লেজের মধ্য-পালক দুটি দীর্ঘতম, তৎপর দুই পারে পালকগুলি ক্রমশঃ হ্রস্বতর হইয়াছে। মাঝখানের দুই জোড়া পুচ্ছ-পালক সম্পূর্ণ কৃষ্ণবর্ণ। অপর গুলির অগ্রভাগ শুভ্র এবং বাহিরের দিকের পতত্রগুলি প্রায় সম্পূর্ণ