পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/২৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

 “শামা” প্রবন্ধে আমি বলিয়াছি যে বুলবুল পাখীর জনপ্রিয়তার জন্য মোগল পাদশাহরাই দায়ী। তাঁহাদের আমল হইতেই ইহার জনপ্রিয়তা এদেশে খুব বেশী। ইহারা একাকী বিচরণশীল, কলহপ্রিয় পাখী নহে। কিন্তু ইহাদের চরিত্রে ক্ষত্রিয়সুলভ তেজ ও আত্মপ্রতিষ্ঠ ভাব আছে। “যুদ্ধং দেহি” বলিলে ইহারা অতিথি-সৎকারে পশ্চাৎপদ হয় না। ইহাদের এই প্রকৃতির সুযোগ গ্রহণ করিয়া মানুষ কিঞ্চিৎ আনন্দলাভের পদ্ধতি বাহির করিয়াছে। এ দেশের ধনীদরিদ্র নির্ব্বিশেষে সৌখীন ব্যক্তিমাত্রই বুলবুল পুষিতেন এবং প্রজনন-ঋতুতে মোরগের লড়াইয়ের মত ইহার দ্বন্দ্বযুদ্ধের প্রতিযোগিতা করাইতেন। বাংলাদেশে এই রেওয়াজ একরূপ উঠিয়া গিয়াছে। পশ্চিম প্রদেশে এখনও টিকিয়া আছে, যদিও ইংরাজী-শিক্ষাভিমানীদের পাখী পোষার সখ হ্রাস পাইতেছে। ত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে একবার অজন্তার পথে নিজাম-রাজ্যে গিয়াছিলাম। তখন বুলবুলের লড়াই সেখানে মহাসমারোহের ব্যাপার ছিল। আমাদের দেশের কুস্তী বা পাশ্চাত্য দেশে বক্সিং প্রতিযোগিতা যেমন জনসমাজে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, হায়দ্রাবাদে বুলবুলির লড়াইয়ের ঋতুতেও সেইরূপ হইত। জয়ী পাখীর পালনকর্ত্তা পাঁচ ছয় হাজার টাকা পর্য্যন্ত প্রাইজ পাইতেন। হয়তো তেহিনো দিবসা গতা। চল্লিশ বৎসর পূর্ব্বেও লক্ষ্ণৌ সহরে নবাবী গন্ধের সৌখীন বাবু সাহেবগণ একটি বুলবুলকে বামহস্তের তর্জ্জনীর উপর বসাইয়া সান্ধ্যভ্রমণে বাহির হইতেন। কোনও প্রাসাদ-অলিনো ঝরোখা-মধ্যে উপবিষ্টা সুন্দরী ললনাকে দেখিতে পাইলে হস্তস্থিত বুলবুলের বন্ধন-সূত্র খুলিয়া তাহাকে ছাড়িয়া দিতেন। শিক্ষিত পাখী উড়িয়া গিয়া ঝরোখা-উপবিষ্টা তরুণীর ললাট-শোভা উজ্জ্বল টিক্‌লীখানি অতর্কিতে চঞ্চুপুটে খুঁটিয়া লইয়া প্রভুকে তাহা সমর্পণ করিত। অপ্রতিভ সুন্দরীর কপট-কোপন কটাক্ষের বাণ খাইয়া নবাব সাহেব