পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৩৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৪
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

ইহারা চঞ্চুদ্বারা গাত্র কণ্ডুয়ন করে, তাহাতে ইহাদের উভয়ের প্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। কাক তাহার সঙ্গিনীর বিশেষ যত্ন লইয়া থাকে। কাকগৃহিনীর প্রসূতি অবস্থায় পুরুষ কাক তাহার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করিয়া আনিয়া সযত্নে খাওয়ায়। অনেক সময় দেখা গিয়াছে স্ত্রী কাক পুরুষ কাকের মুখের গ্রাস কাড়িয়া লইয়াও কোনও শাস্তি পায় নাই। আহার্য্য সম্বন্ধে এরূপ ঔদার্য্য পশুপক্ষীর মধ্যে বিরল।

 কাক অত্যন্ত সন্তানবৎসল। সন্তানদের বিপদ আশঙ্কা করিলে সে মানুষকে আক্রমণ করিতেও পশ্চাদপদ হয় না। চতুর কাককে ধূর্ত্ততর কোকিল প্রতারিত করিয়া নিজ বাচ্চা পালন করাইয়া লয়। এই পালিত শাবকগুলির ক্ষুধা হয় অপরিসীম। কিন্তু অসীম ধৈর্য্যসহকারে শাবকগুলির অপূরণীয় ক্ষুধা মিটাইতে ইহারা একটুও বিরক্ত হয় না। মানুষ পিতামাতাও সন্তানের এত আব্দার সহ্য করেন না। এই শাবকগুলির আহার্য্য আহরণ করিয়া আনিবার “তর সয়না”। আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি একবার খাওয়াইয়া আহার্য্য অন্বেষণে কাকগুলি চলিয়া যাওয়া মাত্র কোকিলশাবক ভীষণ আর্ত্তনাদ জুড়িয়া দেয়। কাক নীরবে সকল বিরক্তি উপেক্ষা করিয়া সন্তানের সেবা করিয়া যায়। কোকিল শিশুর চাহিদা মিটাইতে এত শীঘ্র শীঘ্র উহাদের খাবার লইয়া ফিরিতে হয় যে নিজেরা বোধ হয় খাইবার সময় পায় না—দিবসের বেশীর ভাগ সময় অনাহারে থাকে। পক্ষিসমাজে খুব কম পাখী, শাবক কুলায় পরিত্যাগ করিয়া বাহির হওয়ার পর, শাবক উড়িতে সক্ষম হইলে শাবককে নিজে খাওইয়া দেয়। কিন্তু কাক, বাচ্চা বড় হইয়া বেশ উড়িতে পারিলেও, বাচ্চাগুলিকে খাওয়াইয়া দিয়া থাকে।

 সামাজিক জীবনে কাকের একতা খুব বেশী। দলাদলি একরূপ নাই বলিলেই চলে। সাধারণতঃ পাখীদের মধ্যে পংক্তিভোজন কম। কিন্তু কলিকাতার পথে আবর্জ্জনারাশি ঘিরিয়া কাকের দল নির্ব্বিবাদে