পাতা:বাঙ্গলার পরিচিত পাখী.djvu/৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৬
বাঙ্গলার পরিচিত পাখী

হওয়ায় উহাদিগকে লক্ষ্য করিতে লাগিলাম। হঠাৎ দেখিলাম একটি শালিক, যে এতক্ষণ একটি ম্যাগনোলিয়ার শীর্ষে বসিয়া আরামে ভিজিতেছিল, সে উড়িয়া আসিয়া কাকসভার মাঝখানে উপবেশন করিল। ভাবটা বোধহয় এইরূপ,—“আমার সামনে তোরা চ্যাংড়ামি করিস?” সহসা শালিকের অতর্কিত আগমনে কাকের কলরব থামিয়া গেল। তাহারা ভাবিল, “একে বৃষ্টি তার উপর এই আপদ।” প্রথমে তাহারা ভীতভাবে চারিদিকে নিরীক্ষণ করিল, শালিকের দলবল কাছাকাছি আছে কিনা দেখিয়া লইল। যখন বুঝিল যে শালিকটি যুথভ্রষ্ট, নিতান্তই একাকী, তখন তাহারা সোল্লাসে শালিককে আক্রমণ করিল। ইংরেজ যেমন স্বভাবভীরু কালা আদমীর দলে গিয়া খুব খানিকটা হাঁকডাক করিয়া সকলকে ভীতত্রস্ত করিয়া দেয়, শালিকও তেমনি প্রথমটা মিলিটারী মেজাজ ঝাড়িয়াছিলেন। কিন্তু দলে ভারী কাক “হাম্‌ভী মিলিটারী” ভাবে শালিককে আক্রমণ করিল। পঞ্চরথী বেষ্টিত শালিক বেধড়ক মার খাইয়া আর্ত্তনাদ করিতে করিতে পলায়ন করিল। আর একদিন ওয়ালটেয়ারের এক কাননমধ্যে শালিকের আর্ত্ত চিৎকার শুনিয়া দেখি সেখানেও এক শালিক বোধহয় কাক সভায় ১৪৪ ধারার সমন জারি করিতে গিয়াছিলেন। কাকমণ্ডলী অহিংসার ধার ধারে না, একাকী পাইয়া শালিক পুঙ্গবকে এমন ঠেঙ্গাইল যে সে কোনও গতিকে প্রাণ লইয়া রড় দিল।

 পক্ষিসমাজে প্রণয়নিবেদন কার্য্যটা পুরুষাংশই বেশীর ভাগ করিয়া থাকে। শালিক পুরুষরা ফ্লার্টেশন ব্যাপারটায় আবার একটু বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে। এই অভিসার-আতিশয্য সময় সময় শালিক-তরুণীর বিরক্তিকর বোধ হয়। সেই কারণে কখনও অধিক বেহায়াপণার জন্য স্ত্রী পাখীর তিরস্কার লাভ করে। এই তিরস্কার ঠোনারূপে বর্ষিত হয়—অর্থাৎ চঞ্চুর আঘাতে শালিকজায়া পতিকে শায়েস্তা করে।