পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুৎফুন্নিসা

করিতে দৃঢ়-সংকল্প হইলেন। সিরাজ কিছুতেই তাঁহাকে বুঝাইতে পারিলেন না যে, এ পলায়ন সাময়িক—এ পলায়নের উদ্দেশ্য বল-সংগ্রহ— আত্মরক্ষা ও মোগল-গৌরবের পুনঃ প্রতিষ্ঠা। লুৎফুন্নিসার হৃদয় তাহা বুঝিল না—তিনি স্বামীর অনুগামিনী হইলেন। তিনি বুঝিয়াছিলেন, পতিই নারীর দেবতা—পতি যখন যে অবস্থায় থাকেন, পত্নীর তখন সেই অবস্থায় থাকাই শ্রেয়ঃ ও বাঞ্ছনীয়।

 এ হেন নারীরত্নকে কোন কোন ঐতিহাসিক “রক্ষিতা” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। লুৎফুন্নিসা একাধারে সচিব, সখী, প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনী— হিন্দু-মুসলমানের আদর্শ-পত্নী। তাঁহাকে “রক্ষিতা” নামে অভিহিত হইতে দেখিলে বাস্তবিকই মর্ম্মাহত হইতে হয়। নিজাম রেকর্ড অন্বেষণ করিয়া বিফল মনোরথ হইয়া, ঐতিহাসিকগণ তাঁহার ‘পত্নীত্বে’ সন্দিহান হন; মুতাক্ষরীণকারও তাঁহাকে ‘ক্রীতদাসী’ বলিয়া অভিহিত করিয়া অনেকটা গোল বাধাইয়াছেন, কারণ তাঁহাদের বিশ্বাস, হিন্দুদিগের ন্যায় মুসলমান অভিজাতদিগের সহিত নীচ ক্রীতদাসীর বিবাহ অসম্ভব। কথাটা কতকটা সত্য হইলেও এ ক্ষেত্রে তাহা ঘটিয়াছিল।

 রাত্রি তিনটার সময় সিরাজ দীনবেশে লুৎফুন্নিসা ও তাঁহার চারি বৎসরের কন্যা, কয়েকজনমাত্র বিশ্বস্ত অনুচর ও ধনরত্নাদি সহ সামান্য গো-যানে আরোহণ করিয়া ভগবানগোলার দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। রাত্রি প্রভাত হইল; ক্রমে সূর্য্যকিরণ প্রখর হইতে প্রখরতর হইতেছিল। কোমলাঙ্গী অসূর্য্যম্পশ্যা লুৎফুন্নিসা নিজের কষ্টকে তুচ্ছ করিয়া, অসাধারণ ধৈর্য্যের সহিত ক্রমাগত রুমাল ব্যজন করিয়া স্বামীর ক্লান্তি, অপনোদন করিতে লাগিলেন। সিরাজ স্থলপথে ভগবানগোলায় পৌঁছিলেন। তথা হইতে নৌকাযোগে পদ্মার উত্তাল তরঙ্গরাশি উত্তীর্ণ হইয়া মহানন্দা নদী-পথে উজান বাহিয়া, উত্তরাভিমুখে