পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুৎফুন্নিসা

প্রদেশের শাসনকর্ত্তা রাজা রামনারায়ণ যেরূপ সাহসী সুচতুর, সেইরূপ অকৃত্রিম প্রভুভক্ত; সুতরাং কোনরূপে তাঁহার সহিত মিলিত হওয়াই সিরাজুদ্দৌলার লক্ষ্য হইয়া উঠিল। সরলপথে রাজমহল গমন করিবার চেষ্টা করিলে, মীরজাফরের অনুচরবর্গ সহজে তাঁহাকে কারারুদ্ধ করিবার অবসর পাইবে, এই আশঙ্কায় তিনি মহানন্দার ভিতর দিয়া গুপ্তপথে দীনদরিদ্রেব ন্যায় পাটনার দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন।”[১]

 এই দৈব-দুর্ঘটনাই সিরাজের কাল হইল। এইরূপে তিন দিন তিন রাত্রি অনাহারে কাটাইয়া নবাব ক্ষুৎপিপাসাতুর হইয়া যৎকিঞ্চিৎ খাদ্য সংগ্রহের জন্য দান শাহ্ নামে এক ফকিরের কুটীরে উপস্থিত হন। পূর্ব্বে সিরাজ এই দান শাহর উপর অনেক অত্যাচার করিয়াছিলেন।[২]


  1. “সিরাজুদ্দৌলা”—শ্রীঅক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। পৃঃ ৩৭৫-৭৬।
  2. হণ্টার সাহেব তাঁহার Statistical Account of Bengal (Vol. VII, 84) নামক পুস্তকে লিখিয়াছেন যে,—“দান শাহ্ সিরাজকে ধরাইয়া দিয়া মীরজাফরের নিকট হইতে বহুমূল্য জায়গীর লাভ করিয়া স্বদেশে “সুভামার” খাতিলাভ করিয়াছিলেন; তাঁহার বংশধরগণ অদ্যাপি সেই জায়গীর উপভােগ করিতেছেন।” কিন্তু মালদহের ভূতপূর্ব্ব কালেক্টর শ্রীযুক্ত উমেশচন্দ্র বটব্যাল মহাশয়, মালদহ কালেক্টরীর সেরেস্তা সবিশেষ তদন্ত করিয়াও এইরূপ কোন জায়গীরের সন্ধান পান নাই। অধিকন্তু শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়, দান শাহ্ র সমাধি-মন্দিরের ফলকলিপির সাহায্যে এবং তাঁহার বংশধরদিগের নিকট প্রমাণাদি সংগ্রহ করিয়া প্রকাশ করিয়াছেন যে, দান শাহ্ এই সময়ে আদৌ জীবিত ছিলেন না।
     রিয়াজ-উস-সলাতিন (৩৬০ পৃঃ) নামক গ্রন্থে দান শাহর সিরাজ কর্ত্তৃক লাঞ্ছিত হইবার কথা লিপিবদ্ধ আছে। তারিখ-ই-মনসুরী লেখক কাহারও নামােল্লেখ করেন নাই। তিনি কেবলমাত্র লিখিয়াছেন যে, সিরাজ একজন দরবেশের দাড়ি গোঁপ মুড়াইয়া দিয়া অপমান করিয়াছিলেন, সেই ব্যক্তিই তাঁহাকে ধরাইয়া দেয়। ইংরাজ