পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

এক্ষণে সে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিবার জন্য আহার্য্য-প্রস্তুতের ভাণ করিয়া, গােপনে মীরজাফরের জামাতা মীরকাসিম ও তদীয় সহােদর রাজমহলের ফৌজদার[১] মীরদাউদকে সংবাদ দেন।

 মীরকাশিম সিরাজকে সপরিবারে বন্দী করিয়া পরে মুর্শিদাবাদে প্রেরণ করেন। লুৎফুন্নিসা বেগম মীর কাশিমের হস্তগত হইলেন। মীরকাশিম ভয় প্রদর্শন করিয়া তাঁহার বহুমূল্য অলঙ্কার ও যাবতীয় ধনরত্নাদি কাড়িয়া লইলেন। মীরকাশিমের এই লুণ্ঠনকলঙ্ক তাঁহার জীবনকে চিরকলঙ্কিত করিয়া রাখিবে। ভাগ্যদোষে তিনি তাঁহার করতলগত হইয়াছিলেন, কিন্তু বেগম সাহেবার মর্য্যাদা তাঁহার ন্যায় ন্যায়নিষ্ঠ লােকের অক্ষুন্ন রাখা উচিত ছিল। ইহার পর তাঁহাকে ঢাকায় নির্ব্বাসিতা করা হয়।

 মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইবার পর সিরাজের পরিণাম যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা সকলেই অবগত আছেন। তিনি মীরণের আদেশানুসারে মহম্মদীবেগ কর্ত্তৃক নিহত হইয়া খোসবাগে চিরদিনের জন্য সমাহিত হন।

 সিরাজের মৃত্যুর পর লুৎফুন্নিসার ন্যায়[২] আলিবর্দ্দী-বেগম,

১০


    ঐতিহাসিকগণ দান শাহ্ র সিরাজ কর্ত্তৃক নাসাকর্ণ ছেদনের কথা লিখিয়াছেন,—Iveys’ ‘Voyage’-P. 154; Orme's ‘Indostan’—P. 183.

  1. ষ্টুয়ার্ট সাহেব (পৃঃ ৫৩১) মীরকাশিমকে রাজমহলের ফৌজদার বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন; কিন্তু মুতাক্ষরীণ ও ব্রূমের মতে মীরদাউদই রাজমহলের ফৌজদার।
  2. মজঃফরনামা (১০৬ পৃঃ) নামক গ্রন্থে লিখিত আছে যে, সিরাজের মৃত্যুর পর যখন তাঁহার বেগমগণের নিকট স্ব স্ব পাত্র নির্ব্বাচন করিয়া লইবার প্রস্তাব উত্থিত হইয়াছিল, সেই সময়ে লুৎফুন্নিসাকেও অন্যের নিকট আশ্রয় লইতে বলায়, তিনি সগর্ব্বে উত্তর দিয়াছিলেন—“হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণে অভ্যস্ত লোকে কোথায় গর্দ্দভ-বাহন বাঞ্ছা করে?”—অষ্টাদশ শতাব্দীর ইতিহাস (নবাবী আমল) ২য় সংস্করণ— পৃঃ ৩৪৬।