পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুৎফুন্নিসা

উন্নিসা নামে সিরাজের এক পত্নীর উল্লেখ দেখিয়াছেন এবং তাঁহার মতে ওমদাৎই লুৎফুন্নিসা।[১] এই ওমদাৎ-উন্নিসা ১৭৯১ খৃঃ অব্দে আগষ্ট মাসে গবর্ণমেণ্টের নিকট মাসহারা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেন। বেভারিজের এই উক্তি হইতে দেখা যাইতেছে যে, সিরাজের মৃত্যুর ৩৭ বৎসর পরেও লুৎফুন্নিসা জীবিত ছিলেন।

 শুনা যায়, স্বামীর সমাধি পূজা করিতে করিতে তাঁহার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তিনিও খােসবাগে স্বামীর দক্ষিণভাগে, তাঁহারই পদতলে চিরনিদ্রিতা হন।

 যাও সাধ্বী, স্বামীর সকাশে যাও—যাও সতী তােমার পতি-ধ্যান শেষ হইয়াছে—জগতে তুমি দেখাইয়াছ, সহস্র দোষে দোষী হইলেও পতি দেবতা। যদিও তুমি অধিক দিন স্বামীর নশ্বর দেহের সেবা করিতে পাও নাই, তবুও তুমি অবিগলিত নেত্রে বহুদিন স্বামীর কবরপার্শ্বে বসিয়া উন্মাদিনীর ন্যায় কখন ব্যজন করিয়াছ—কখনও পুষ্পমাল্য সাজাইয়াছ— কখনও প্রেমভরে কবরের উপর চুম্বন করিয়া প্রেমাস্পদকে চুম্বন করিতেছ ভাবিয়া, অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করিয়াছ। জগতে তুমি দেখাইয়াছ, জীবনে মরণে পতির সহিত পত্নীর অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ—সর্ব্বসংহারক ‘কাল’ তাহা ছেদন করিতে পারে না—আইনকানুন তাহা ছেদ করিতে পারে না। চুক্তি করিয়া দেহের সম্বন্ধ স্থাপিত হইতে পারে—আত্মার সম্বন্ধ স্থাপিত হইতে পারে না।

১৩


  1. “It would be interesting to know whether this lady was the same as Umdatunnissa Begum, who is described in the Nizamut as the widow of Siraj. If so, she did not die till 5 Rabi-us-Sani 1208, i. e. 10th November, 1794.” Calcutta Review—1892—P.204