পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমিনা

করিলে পাছে তাঁহার প্রভুর পরিবারবর্গের কোন অনিষ্ট হয়। রাজবল্লভের এই আচরণে সিরাজ ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে নজরবন্দী করিয়া রাখেন; পরে বেগম আমিনার কথায় মুক্তি দান করেন।

 পরদুঃখকাতরা, দয়া ও মমতার নির্ঝরিণী আমিনা, পুত্র সিরাজুদ্দৌলাকে সতত দয়া-ধর্ম্ম আচরণ করিতে উপদেশ দিতেন। আমিনার কার্য্যাবলীতে নিষ্ঠুরতার লেশমাত্র ছিল না। পরের দুঃখে তাঁহার হৃদয় গলিয়া যাইত। তাই অবরুদ্ধ বেগম-জনসন্ (Mrs. William Watts) আমিনার অনুগ্রহে অন্তঃপুর হইতে রক্ষা পাইয়াছিলেন। অবরোধাবস্থানে জনসনের কষ্ট দেখিয়া তিনি এতদূর ব্যথিত হইয়াছিলেন যে, ক্ষণকালের জন্য তিনি আপনার স্বার্থ পর্য্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছিলেন। তাঁহার কষ্ট করুণহৃদয়া আমিনার পক্ষে অসহ্য হওয়ায়, তিনি পুত্রের ভবিষ্যতের দিকে একবারও চাহিয়া দেখেন নাই। বেগম-জনসন্‌কে অবরুদ্ধ করিয়া রাখিতে পারিলে, ইংরাজ যে সহজেই তাঁহাদের সহিত সন্ধির প্রস্তাব করিতে বাধ্য হইবে, তাহা জানিয়াও বেগমের দুঃখে ব্যথিত-হৃদয়া আমিনা, গোপনে তাঁহাকে মুক্তি দান করিয়াছিলেন।

 আমরা আমিনার পরদুঃখকাতরতার আরও একটী দৃষ্টান্তের উল্লেখ করিতেছি।

 যে সময় বৃটিশ-বন্দীরা নবাব সিরাজুদ্দৌলার দ্বারা প্রপীড়িত হইতেছিল, সেই সময় নবাবের মাতামহী ও আমিনা বেগম, বন্দীদিগের মুক্তির জন্য সিরাজকে অনেক করিয়া বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন যে, দণ্ড যেরূপ রাজধর্ম্ম, আর্ত্তের প্রতি ক্ষমাও সেইরূপ রাজার অবশ্যকর্ত্তব্য। কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় সিরাজ এই অমৃতময় উপদেশ কার্য্যে পরিণত করিবেন কি না ভাবিতেছিলেন; কেন না তাঁহার বন্ধুদিগের মধ্যে অনেকেই তাঁহাকে বলিতেছিলেন—“হলওয়েলের ন্যায়