পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমিনা

 সিরাজ যখন ইংরাজদিগের সহিত যুদ্ধের আয়োজন করিতেছিলেন, সেই সময় আমিনা তাঁহাকে ঐ যুদ্ধ হইতে নিবৃত্ত করিবার জন্য বিশেষ উপদেশ দিয়াছিলেন। তিনি বলিয়াছিলেন—“তুমি নবাব, তোমার মর্য্যাদা কত, তাহা কি তুমি জান? তুমি এত বড় হইয়া কি না সামান্য বণিক্‌দিগের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতেছ? এ তোমার রাজসম্মানের পক্ষে, তোমার নিজের পক্ষে, বড়ই নিন্দার বিষয়—পদ-মর্য্যাদা রক্ষা করিতে হইলে, তাহাদিগের সহিত যুদ্ধ করা কখনও উচিত নয়;” কিন্তু সিরাজ তখন যশোলাভের জন্য লালায়িত—ইংরাজদিগকে দমন করিয়া আপনার প্রতিপত্তি অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য ব্যাকুল, সুতরাং তাঁহার কর্ণে মাতার উপদেশ-বাক্য প্রবেশ করিল না। নির্ব্বোধের মত জননীর বাক্য অবহেলা করিয়া যুদ্ধের আয়োজন করিতে লাগিলেন।[১] এই যুদ্ধের ফল ইতিহাস পাঠকের অবিদিত নহে।

 আমিনার হৃদয় দয়ার প্রস্রবণ। নিয়তই সেই হৃদয় বিগলিত করিয়া করুণারস ক্ষরিত হইত। তাঁহার দয়াশীলতার দু’একটী দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিয়া, তাঁহার হৃদয় কি উপাদানে গঠিত ছিল, তাহার আভাষ দিতে পূর্ব্বেই চেষ্টা করিয়াছি; কিন্তু নানাবিধ সদ্‌গুণে ভূষিতা হইলেও, আমিনার চরিত্র একেবারে নিষ্কলঙ্ক ছিল, এ কথা বলা যায় না।

 সিরাজের জ্যেষ্ঠতাত নওয়াজিস মহম্মদ ঢাকার শাসনকর্ত্তার পদ লাভ করিয়াছিলেন। তিনি বরাবরই তাঁহার প্রিয়পাত্র হোসেনকুলি খাঁকে বিশ্বাস করিতেন ও আন্তরিক ভাল বাসিতেন। কালক্রমে হোসেন

১৯


  1. Translation of a letter from M. Le Conte to M. Courtin at Dacca, dated Chundernagore, 19th June, 1756” - Indian Records Series: Bengal.-1—20.