পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

জৈনুদ্দীন তৎক্ষণাৎ অসি-গ্রহণের চেষ্টা করিলেন, কিন্তু উহা নিষ্কাশিত করিবার পূর্ব্বেই তাঁহার মস্তক স্কন্ধচ্যুত হইয়া পড়িল। দরবার-গৃহ ও প্রাসাদের চতুর্দ্দিক এক্ষণে আফগানদল-বেষ্টিত; পাটনার নবাব-সৈন্য তাহাদিগকে বাধা দিতে পারিল না। সকলে আপন আপন প্রাণ রক্ষার্থ পলায়ন করিতে বাধ্য হইল। মুতাক্ষরীণকার গােলাম হােসেনের ভ্রাতা সৈয়দ আলি অন্তঃপুর মধ্যে পলায়ন করেন। এই সময়ে জৈনুদ্দীনের পত্নী আমিনা বেগম অন্তঃপুরের দ্বার রুদ্ধ করিবার অনুমতি প্রদান করায়, তাঁহার আদেশে তৎক্ষণাৎ দ্বার রুদ্ধ হইল। আমিনা সৈয়দ আলিকে নিজের উপায় দেখিতে বলিলেন। বিদ্রোহিগণ ধনরত্ন কোথায় লুক্কায়িত আছে জানিতে না পারিয়া, কোষাধ্যক্ষ হাজি অহম্মদকে নিষ্ঠুররূপে পীড়ন করিয়া হত্যা করে।[১] পাটনার নবাবী-সম্পত্তি বিদ্রোহীদিগের হস্তগত হইল। আমিনা ও অন্যান্য বেগমকে বলপূর্ব্বক উন্মুক্ত গো-যানে আরােহণ করাইয়া সমসের খাঁর শিবিরে প্রেরণ করা হইল। পাটনায় হুলস্থূল পড়িয়া গেল।

 এই বিপদের সংবাদে আলিবর্দ্দী বিহ্বল ও কাতর হইয়া পড়িলেন। নবাবের চিরসহচর ভাগ্যলক্ষ্মী এবারও তাঁহার প্রতি বিমুখ হ’ন নাই— তিনি আফগান সর্দ্দারদিগকে সমরক্ষেত্রে নিপাতিত করিয়া, আমিনা বেগম প্রভৃতির উদ্ধার সাধন করেন।

 পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পরিণাম কি হইয়াছিল, তাহা সকলেই অবগত আছেন—সে সকল কথার পুনরুল্লেখ এখানে নিষ্প্রয়ােজন।

 মীরণের উপদেশানুসারে নির্ম্মম নিষ্ঠুর মহম্মদীবেগ সিরাজকে

২৪


  1. অর্ম্মে (ii—41) লিখিয়াছেন—জৈনুদ্দীনের স্ত্রী আমিনা বেগম, স্বীয় শ্বশুরের দুর্গতি দেখিতে না পারিয়া, বিষ-প্রদানে তাঁহার যন্ত্রণা মােচন করেন।