পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

কি হৃদয়-বিদারক দৃশ্য! পরে জনৈক সম্ভ্রান্ত মুসলমান নিজ প্রাসাদের উপর হইতে এই শােচনীয় দৃশ্য দেখিয়া, লােক পাঠাইয়া বলপূর্ব্বক আমিনাকে বাটীতে আনয়ন করাইলেন।

 মীরজাফর, আমিনা ও ঘসিটী বেগমকে বন্দী করিয়া মুর্শিদাবাদ হইতে জাহাঙ্গীর নগর (ঢাকায়) প্রেরণ করেন। বন্দিনী অবস্থায় তাঁহাদিগকে অশেষ যন্ত্রণা ভােগ করিতে হইয়াছিল। অসচ্চরিত্র নীচমনা মীরণ, আমিনা ও ঘসিটী বেগমদ্বয়ের উপর সন্দেহ উপস্থিত হওয়ায় এবং তাহারা জীবিত থাকিলে ভবিষ্যতে তাহার বিপদ হইবার সম্ভাবনা মনে করিয়া, জাহাঙ্গীর নগরের শাসনকর্ত্তা জেসারৎ খাঁকে তাঁহাদের বিনাশের জন্য বারংবার লিখিয়া পাঠান, কিন্তু সদাশয় জেসারৎ খাঁ এই নৃশংস ব্যাপারে অসম্মতি জ্ঞাপন করিলে, মীরণ তাঁহার একজন বন্ধুর উপর এই অমানুষিক কার্য্য সমাধা করিবার ভার অর্পণ করেন এবং তাহাকে বলিয়া দিলেন যে, মুর্শিদাবাদে লইয়া যাইবার ছলে তাহাদিগকে একখানা নৌকায় চড়াইয়া কোন নির্জ্জন স্থানে নৌকাখানি ডুবাইয়া দিবে। যখন তাঁহারা সেই নির্জ্জন স্থানে আসিয়া পৌঁছিলেন, তখন তাঁহাদিগের আসন্ন পরিণামের কথা জানান হইল এবং তাঁহাদিগকে হস্তমুখাদি ধৌত করিয়া পবিত্র হইয়া বস্ত্রাদি পরিধান করিতে আদেশ করা হইল। ঘসিটী এই নিদারুণ বাণী শুনিয়া অশ্রু সংবরণ করিতে পারিলেন না; কিন্তু আমিনা তাঁহার দিকে ফিরিয়া তাঁহাকে শান্ত করিতে চেষ্টা করিলেন। পরে উভয়ে বস্ত্রাদি পরিধান পূর্ব্বক, করবলার মৃত্তিকা কপােলদেশে লেপন করিয়া, নিজেদের পাপের জন্য ভগবানের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। অতঃপর মীরণ-প্রেরিত দূতকে তাহার প্রভুর কথামত কার্য্য করিতে বলিলেন। তাহাকে সে কার্য্য করিতে ইতস্ততঃ করিতে দেখিয়া, আমিনা গম্ভীরস্বরে বলিতে লাগিলেন—“হে সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর! আমরা উভয়েই পাপী ও দোষী, কিন্তু

২৬