পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

কন্যাদিগকে বুঝাইয়াও পাপমার্গ হইতে সুপথে আনয়ন করিতে পারিলেন —রূপােন্মত্ত হােসেন কুলিকেও প্রণয়াস্পদের নিকট হইতে দূরে রাখিতে অকৃতকার্য্য হইলেন, তখন মাতৃস্নেহের বশবর্ত্তিনী হইয়া কন্যাদিগের দোষ না দেখিয়া হােসেন কুলিকেই তাহাদের সর্ব্বনাশের মূল ভাবিয়া, তাহার হত্যার জন্য সিরাজকে উত্তেজিত করিতে লাগিলেন। সিরাজও তাঁহার আদেশে হােসেন কুলিকে হত্যা করাইলেন।

 ইহার কিছুদিন পরে নওয়াজিস মহম্মদের মৃত্যু হয়। তাঁহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে ঘসিটী বেগমের অর্থের প্রতি সিরাজের লােলুপ দৃষ্টি পড়িয়াছিল; কিন্তু ঘসিটীও এই কথা জানিতে পারিয়া, পূর্ব্ব হইতে ধনরত্নাদি লইয়া মতিঝিলে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। আলিবর্দ্দীর জীবদ্দশায় সিরাজ ঘসিটীর বিপক্ষতাচরণ করিতে পারেন নাই। ১৭৫৬ খৃঃ অব্দে আলিবর্দ্দীর মৃত্যুতে রাজলক্ষ্মী যখন সিরাজের অঙ্কশায়িনী হইলেন, তখন পিতৃব্যধন-লুণ্ঠন-প্রয়াসী সিরাজ মতিঝিল অবরােধ করিলেন। বিপদ গুরুতর দেখিয়া আলিবর্দ্দী-বেগম স্বয়ং এই বিপদ ভঞ্জনার্থ অবরুদ্ধ দুর্গপ্রাসাদে প্রবেশ করিলেন এবং স্থির করিয়া দিলেন, ঘসিটীর পােষ্যপুত্র বাঙ্গালার মসনদে বসিতে পারিবে না বা ঘসিটী আপনার পােষ্যপুত্রের জন্য যুদ্ধাদি করিতে পারিবে না। সিরাজকে বাঙ্গালার নবাব বলিয়া সে স্বীকার করিবে, আর সিরাজও ঘসিটীর স্বামীত্যক্ত-সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না। কিন্তু যে দিন বিবাদ মিটিল, সিরাজ তাহার পরদিবসেই মতিঝিলের যাবদীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিলেন। এই সমস্ত কারণে ঘসিটী সিরাজের আশ্রয় লইলেন। ইহারই ফলে সিরাজের ইংরাজদিগের সহিত ঘােরতর বিবাদের সূত্রপাত হইল ও তিনি কলিকাতা আক্রমণ করিলেন। হলওয়েলকে ধৃত করিয়া মুর্শিদাবাদে আনা হইল; কিন্তু অল্পদিন পরেই তিনি মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন। সিরাজ যে এত

৩২