পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মণিবেগম

সিরাজের হিরাঝিলের প্রাসাদ হইতে মীরজাফর যে সমস্ত রত্নরাজি গোপনে আত্মসাৎ করিয়াছিলেন, পরে মণিবেগমই তৎসমুদয়ের অধিকারিণী হ’ন।

 নবাব মীরজাফর বৃদ্ধবয়সে শাসনকার্য্য পরিচালনে অসমর্থ হওয়ায় মীরকাশিমকে ডেপুটী নাজিমরূপে নিযুক্ত করেন। তিনি মুর্শিদাবাদে নামে-নবাব হইয়া থাকিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এই কারণে তিনি শাসনভার পরিত্যাগ করায়, অনতিবিলম্বে কাউন্সিল কর্ত্তৃক পদচ্যুত হইলেন। ১৭৬০ খৃষ্টাব্দের মার্চ্চ মাসে মীরকাশিম নবাব-নাজিম হইলেন। জাফর ও তাঁহার পত্নী মণিবেগম অনুচরবর্গসহ অর্থাদি লইয়া কলিকাতায় আগমন করিলেন। কলিকাতায় পৌঁছিয়া তিনি ময়দাপটীতে জমী ক্রয় করিয় তথায় গৃহ নির্মাণপূর্ব্বক মণিবেগমের সহিত কিছুদিন অবস্থান করিয়াছিলেন।[১]

 ১৭৬৫ খৃঃ অব্দে মীরজাফরের মৃত্যু হইলে, নূতন নবাব নিয়োগের জন্য মুর্শিদাবাদের রাজকোষ কোম্পানীর কর্ম্মচারিবৃন্দের সম্মুখে উন্মুক্ত করিয়া দেওয়া হয়। মীরজাফরের পুত্রগণের মধ্যে যাহারা জীবিত ছিলেন, তন্মধ্যে নিজামুদ্দৌলাই জ্যেষ্ঠ; বৃদ্ধ নবাব অন্তিম কালে তাঁহাকেই মসনদে বসাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া যান। তাঁহার জীবদ্দশাতেই তদীয় জ্যেষ্ঠপুত্র মীরণের মৃত্যু হইয়াছিল। কলিকাতা কাউন্সিলের সভ্যগণ মীরণের শিশুপুত্রের আবেদন অগ্রাহ্য করিয়া, নিজামুদ্দৌলাকেই মসনদে বসান। দেশীয় প্রধান প্রধান ব্যক্তিরা কেহই মীরণের শিশুপুত্রের অনুকূলে ছিলেন না, কারণ তাহার নিকট হইতে অর্থ প্রাপ্তির কোনই সম্ভাবনা ছিল না, অধিকন্তু মুসলমান ব্যবহার-শাস্ত্রানুসারে পিতৃব্য জীবিত

৩৭


  1. Walsh's “Murshidabad"-P. 152.