পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘসিটী

স্ফুটনোন্মুখ কুসুমে কীটের ন্যায়, যৌবনোদ্গমে তাঁহার ও হৃদয়-কোরকে কীট প্রবেশ করিয়াছিল। বাল্যকালাবধি সংযম-শিক্ষার অভাবে ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় পড়িয়া, মদালসা ঘসিটী হোসেনকুলিকে আত্মবিক্রয় করিয়াছিল। পত্নীর কলঙ্কের কথা জানিতে পারিয়া, নওয়াজিস মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্ব্বেই হোসেনকুলি খাঁকে ধরাধাম হইতে অপারিত করিবার জন্য লোক নিযুক্ত করিয়াছিলেন।

 ঘসিটীর কলঙ্ক-কাহিনী সিরাজকে মর্ম্মাহত করিয়া তুলিয়াছিল। এই দুরপনেয় কলঙ্ক-কালিমা বিদূরিত করিবার জন্য, তিনি হোসেন কুলিকে হত্যা করাইলেন—সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার ভ্রাতা হসনুদ্দীনও নিহত হইলেন। উপর্য্যুপরি এই সমস্ত হত্যাব্যাপারে অতিমাত্র শঙ্কিত হইয়া, সিরাজের পিতৃব্য সৈয়দ অহম্মদ পূর্ণিয়ায় পলায়ন করেন; কিন্তু পলায়ন করিয়া কে কবে নিয়তির হস্ত হইতে অব্যাহতি পাইয়াছে? পূর্ণিয়াতে পৌছিবার অত্যল্পকাল পরেই তাঁহার মৃত্যু হয়।[১] ইতিপূর্ব্বে নওয়াজিসেরও মৃত্যু হইয়াছিল। সুতরাং বংশের মধ্যে সিরাজকে বাধা দিবার দুইজন মাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জীবিত রহিলেন। প্রথম— ঘসিটী বেগম। স্বামী ও প্রেমাস্পদ হোসেনকুলির মৃত্যুতে কক্ষচ্যুত গ্রহের ন্যায় তিনি ঘুরিতে লাগিলেন, অবশেষে ফজল্‌কুলি খাঁর শিশুপুত্র মুরাদদ্দৌলাকে পালিতপুত্ররূপে গ্রহণ করিয়া, হৃদয়ের সমস্ত ভালবাসা তাহারই উপর কেন্দ্রীভূত করিলেন ও তাহাকে তাঁহার স্বামীত্যক্ত বিপুল ধনরাশির উত্তরাধিকারী বলিয়া প্রচার করেন। মুরাদকে বাঙ্গালার মসনদে বসাইবার নিমিত্ত প্রাণপণে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। দ্বিতীয়—

৪৯


  1. মুতাক্ষরীণমতে (Cambray's Edition—iii—150) ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারী ইঁহার মৃত্যু হইয়াছিল।