পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

শরণাপন্ন হইতে সম্মত করাইবার জন্য সেই দুর্গপ্রাসাদে প্রবেশ করিলেন এৱং সিরাজের হস্তে তাঁহার ধনসম্পত্তিও অক্ষুন্ন থাকিবে ইত্যাদি অশ্বাসবাক্যে তাঁহাকে নিশ্চিন্ত করিতে লাগিলেন। ঘসিটি বেগম বলিলেন যে, যদি তাঁহার বিশ্বস্ত কর্ম্মচারী নাজির আলিকে অক্ষত দেহে নিরাপদে বাঙ্গালা পরিত্যাগ করিয়া যাইতে দেওয়া হয়, তাহা হইলে তিনি সমস্ত প্রস্তাবেই সম্মত হইয়া আত্মসমর্পণ করিবার জন্য প্রস্তুত। নবার তাহাতেই সস্মত হইলেন এবং তাঁহাকে রক্ষি-সমভিব্যাহারে রাজ্যের সীমান্ত প্রদেশে পৌঁছাইয়া দিতে আদেশ করিলেন। নাজির আলি আত্মপ্রাণ রক্ষার্থ সমস্ত মায়া কাটাইয়া বাঙ্গালা পরিত্যাগ করিয়া গেলেন। জনশ্রুতি যে, তিনি মােগলরাজধানী দিল্লীতে গিয়া লােকজন সংগ্রহ করিয়াছিলেন।

 সিরাজ ও ঘসিটি বেগমের মধ্যে যে মনােমালিন্য ঘটিয়াছিল, মীরনাজির আলি খাঁর বাঙ্গালাত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তাহা বিদূরিত হইল। বেগমপক্ষীয় সেনাপতিগণ নবাবের বশ্যতা স্বীকার করিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। পর দিবস নবাব ঐ দুর্গ-প্রাসাদ দখল করিয়া, বেগমকে তাঁহার নিজের অন্তঃপুরে পাঠাইয়া দিলেন এবং মতিঝিলে বেগমের যে অপর্যাপ্ত অর্থরাশি ছিল, তৎসমুদয় সংগ্রহ পূর্ব্বক রাজকোষভুক্ত করিলেন। শুনা যায়, ঐ অর্থের পরিমাণ প্রায় ত্রিশ কোটী রৌপ্যমুদ্রা।

 মীরনাজির আলির বাঙ্গালা পরিত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই শান্তি সংস্থাপিত হইল বটে, কিন্তু এই নিস্তব্ধতা একটা আসন্ন ঝটিকার ভীষণ সূচনামাত্র। সিরাজ ঘসিটির ধনসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিলে বেগম-সাহেবা ইংরাজের শরণাগত হইলেন। ইংরাজেরা বহু পূর্ব্ব হইতেই সিরাজের প্রতি বিরূপ ছিলেন এবং প্রতিকূলতাচরণের সুযােগ অন্বেষণ করিতেছিলেন। তাঁহারা

৫৪