পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘসিটী

সানন্দে এ সুযােগের সদ্ব্যবহার করিতে মনস্থ করিলেন ও বেগমকে কলিকাতায় আশ্রয় দিয়া, তাঁহার ধনরত্নাদি রক্ষণাবেক্ষণ করিতে লাগিলেন। রাজবল্লভকে হস্তগত করিবার জন্য তাঁহাকেও আশ্রয় দিলেন এবং শুনিতে পাওয়া যায় যে, পূর্ণিয়ার নবাবের সঙ্গেও না কি তাঁহাদের একটা বন্দোবস্ত হইয়াছিল। পক্ষান্তরে ইংরাজগণ আলিবর্দ্দীর রাজত্বকালে অনেক গর্হিত কার্য্য করিয়া, সিরাজের বিরাগভাজন হইয়াছিলেন। তাঁহারা বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, সিরাজ নবাব হইলে তাঁহাদিগকে বিশেষ অসুবিধা ভােগ করিতে হইবে। এই জন্য ইংরাজেরা তাঁহার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিতে লাগিলেন। এই ষড়যন্ত্রের কথা সিরাজের কর্ণগােচর হইয়াছিল বলিয়াই ইংরাজের বিরুদ্ধে তাঁহার সৈন্য়চালনা, কলিকাতা- আক্রমণ, কলিকাতার দুর্গে সিরাজ-হস্তে ইংরাজগণের নির্যাতন ভােগ, ইত্যাদি কাণ্ড সংঘটিত হয়।

 সিরাজ নবাব হইয়াই পাটনার রাজা রামনারায়ণের সহিত কর্ম্মনাশা নদী সম্বন্ধে আবশ্যক কথাবার্ত্তাদি কহিবার জন্য সহরের তিন মাইল দূরে শিবির সন্নিবেশ করিলেন এবং তাঁহার সহিত মিলিত হইবার জন্য যাত্রার আয়ােজন করিতে লাগিলেন। এমন সময় তিনি শুনিলেন যে, পাঠানেরা তাঁহার অধিকারে লুটপাট আরম্ভ করিয়াছে, সুতরাং তাঁহার আর পাটনা যাওয়া হইল না—তিনি সেই সমস্ত সৈন্য লইয়াই পাঠানগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান করিলেন। সেই সময় তিনি শুনিলেন, ইংরাজেরা ঘসিটি বেগমকে আশ্রয় দিয়া, নবাবের কোপ হইতে আত্মরক্ষার নিমিত্ত কলিকাতার চতুর্দ্দিকে পরিখা খনন করিতেছেন। এই সংবাদ শ্রবণে অতিমাত্র ক্রুদ্ধ হইয়া, সিরাজ ইংরাজগণকে বলিয়া পাঠাইলেন যে, যদি তাঁহারা পরিখা-খননকার্য্য স্থগিত না রাখেন, তাহা হইলে তিনি স্বয়ং কলিকাতায় উপস্থিত হইয়া তাঁহাদিগকে তাঁহার আদেশ পালনে বাধ্য করাইবেন।