পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গ্‌লার বেগম

 এই ঘটনার কিছুদিন পূর্ব্বে সিরাজ সওকৎজঙ্গকে তাঁহার অধীনতা স্বীকার করিবার জন্য পূর্ণিয়ায় এক শিরােপা প্রেরণ করেন। সওকৎজঙ্গ সে শিরােপা ফেরৎ দিয়া বলিয়া পাঠান যে, আলিবর্দ্দী খাঁ মৃত্যুকালে বলিয়া গিয়াছেন, পূর্ণিয়া স্বাধীন রাজ্য; উহা সিরাজের অধীন নহে। ইহাতে সিরাজ সাতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন; তৎপরে তিনি যখন শুনিলেন যে, সওকৎজঙ্গ ঘসিটি বেগমকে পনের হাজার সৈন্য সাহায্য করিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন এবং তাঁহার উচ্ছেদ সাধনার্থ ইংরাজের সহিত ষড়যন্ত্র করিতেছেন, তখন তাঁহার ক্রোধের পরিসীমা রহিল না। তিনি সওকৎজঙ্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিলেন; কিন্তু রাজমহলের পার্ব্বত্যপ্রদেশে পৌঁছিবার পর তাঁহার সেনাপতিগণ আর অগ্রসর হইল না। সকলেই সমস্বরে বলিল, সম্মুখে বর্ষাকাল—শীঘ্রই পথঘাট দুর্গম হইয়া উঠিবে, তখন প্রত্যাবর্ত্তন করা অতীব দুরূহ হইয়া পড়িবে। অগত্যা সিরাজ কৌশলক্রমে সওকৎজঙ্গকে নিকটে আনাইয়া হত্যা করিবার অভিপ্রায়ে তাঁহাকে বলিয়া পাঠাইলেন—“তুমি আমার নিকটে আসিয়া আমার প্রভুত্ব স্বীকার কর।” সওকৎ সিরাজের দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া প্রত্যুত্তরে জানাইলেন—“আমি তােমার প্রভুত্ব স্বীকার করিলাম, কিন্তু বর্ষাকাল উপস্থিত হওয়াতে তােমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারিলাম না।”

 রাজমহলে অবস্থান কালে সিরাজ শুনিলেন যে, ইংরাজেরা তাঁহাকে হত্যা করিয়া অপর কোন ব্যক্তিকে সিংহাসন দিবার চেষ্টা করিতেছেন এবং ঘসিটি ও সওকৎজঙ্গ সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। কেহ কেহ বলেন যে, সিরাজ দূতমুখে ইহা জানিতে পারিয়াছিলেন। আবার অনেকে বলিয়া থাকেন যে, বেলি নামক কাশিমবাজারস্থ একজন ইংরাজ কর্ম্মচারী এই সংবাদ প্রচার করেন। এই দুইটির মধ্যে কোন্‌টী সত্য, তাহার বিচার

৫৬