পাতা:বাঙ্গ্‌লার বেগম - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জিন্নতুন্নিসা

জামাতা আতাউল্লা খাঁর হস্ত হইতে রাজমহলের ফৌজদারী গ্রহণ করিয়া তাঁহাকে পদচ্যুত করিবার মন্ত্রণা চলিতে লাগিল। এই সমস্ত কারণে হাজি অহম্মদ উৎপীড়িত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত হইয়া, প্রতিকার বিধানের জন্য স্বীয় ভ্রাতা আলিবর্দ্দীকে পাটনায় পত্র লিখিলেন।

 এই সংবাদ শ্রবণে ও সরফরাজের নানারূপ অত্যাচারের প্রতিকার মানসে আলিবর্দ্দী সসৈন্যে পাটনা হইতে মুর্শিদাবাদ যাত্রা করিলেন ও গিরিয়ার ভীষণ যুদ্ধে সরফরাজকে পরাস্ত করিলেন। এই যুদ্ধে সরফমাজের মৃত্যু হয়। যুদ্ধের দুই দিবস পরে আলিবর্দ্দী বিশেষ সমারোহে নগরে প্রবেশ করিলেন। প্রাসাদে প্রবেশ করিয়া, মসনদে বসিবার পূর্ব্বে তিনি জিন্নতুন্নিসার কক্ষদ্বারে উপস্থিত হইলেন ও সসম্রমে মস্তক অবনত করিয়া বেগম-সাহেবার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাহিলেন। পরে ধীরস্বরে বলিলেন—“অদৃষ্টে যাহা ছিল, তাহা হইয়াছে এবং এই হতভাগ্য গোলামের অকৃতজ্ঞতা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় জাজ্বল্যমান থাকিবে; কিন্তু আমি শপথ করিয়া বলিতেছি যে, যতদিন জীবিত থাকিব, ততদিন আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিতে ত্রুটি করিব না। আশা করি, এই হতভাগ্য, বিনীত ও সন্তপ্ত গোলামের অপরাধ সময়ে আপনার স্মৃতি হইতে মুছিয়া যাইবে।”

 পুত্রশোকাতুরা জিন্নতুন্নিসা আপনার শোচনীয় অবস্থার বিষয় চিন্তা করিয়া ও মুর্শিদাবাদের চতুর্দ্দিকে আলিবর্দ্দীর সৈন্য-সমাবেশ দেখিয়ে বন্দিনী হইবার ভয়ে নিরুত্তর রহিলেন।

 ইহার পর কতদিন তিনি যে কি ভাবে জীবন যাপন করিয়াছিলেন, তাহা জানিতে পারা যায় না। তবে আজিমনগরে, প্রাসাদ হইতে অর্দ্ধ মাইল উত্তরে বেগম-সাহেবা যে মস্‌জিদ নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন; তাহার

৬৩