পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিত্র গল্প।

 স্বর শুনিয়া যুবক চোখ ছাড়িয়া দিয়া সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল, জুলিখার মুখের দিকে চাহিয়া অম্লানবদনে কহিল “তুমি ত তিন্নি নও।” যেন জুলিখা বরাবর আপনাকে তিন্নি বলিয়া চালাইবার চেষ্টা করিতেছিল, কেবল যুবকের অসামান্য তীক্ষ্ণবুদ্ধির কাছে সমস্ত চাতুরী প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে।

 জুলিখা বসন সম্বরণ করিয়া দৃপ্তভাবে উঠিয়া দাঁড়াইয়া দুই চক্ষে অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন “কে তুমি!”

 যুবক কহিল “তুমি আমাকে চেন না। তিন্নি জানে। তিন্নি কোথায়!”

 তিন্নি গােলযােগ শুনিয়া বাহির হইয়া আসিল। জুলিখার রােষ এবং যুবকের হতবুদ্ধি বিস্মিতমুখ দেখিয়া আমিনা উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল।

 কহিল “দিদি ওর কথা তুমি কিছু মনে করিয়ো না। ওকি মানুষ! ও একটা বনের মৃগ। যদি কিছু বেয়াদবী করিয়া থাকে, আমি উহাকে শাসন করিয়া দিব। দালিয়া, তুমি কি করিয়াছিলে!”

 যুবক তৎক্ষণাৎ কহিল “চোখ টিপিয়া ধরিয়াছিলাম। আমি মনে করিয়াছিলাম তিন্নি। কিন্তু ও ত তিন্নি নয়।”

 তিন্নি সহসা দুঃসহ ক্রোধ প্রকাশ করিয়া উঠিয়া কহিল “ফের! ছোট মুখে বড় কথা! কবে তুমি তিন্নির চোখ টিপিয়াছ? তােমার ত সাহস কম নয়!”