পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
বিচিত্র গল্প।

বলিয়া বিশ্বাস করে কিন্তু আমি বলিতেছি ইহা একেবারে অন্তঃসারবিহীন।”—

 তখন উভয়ে মিলিয়া তাহাই প্রমাণ করিয়া দিতে কৃতসঙ্কল্প হইল। কাদাখোঁচা নদীতীরে লম্ফ দিয়া পৃথিবীর কোমল কর্দ্দমে অনবরতই চঞ্চু বিদ্ধ করিয়া বসুন্ধরার জীর্ণতা নির্দ্দেশ করিতে লাগিল এবং কাঠঠোকরা বনস্পতির কঠিন শাখায় বাশ্বার চঞ্চু আঘাত করিয়া অরণ্যের অন্তঃশূন্যতা প্রচার করিতে প্রবৃত্ত হইল।

 বিধিবিড়ম্বনায় উক্ত দুই অধ্যবসায়ী পক্ষী সঙ্গীতবিদ্যায় বঞ্চিত। অতএব কোকিল যখন ধরাতলে নব নব বসন্ত সমাগম পঞ্চমম্বরে ঘোষণা করিতে লাগিল, এবং শ্যাম যখন অরণ্যে নব নব প্রভাতোদয় কীর্ত্তন করিতে নিযুক্ত রহিল, তথন এই দুই ক্ষুধিত অসন্তুষ্ট মূক পক্ষী অশ্রান্ত উৎসাহে আপন প্রতিজ্ঞা পালন করিতে লাগিল।

 এ গল্প তোমাদের ভাল লাগিল না? ভাল লাগিবার কথা নহে। কিন্তু ইহার সর্ব্বাপেক্ষা মহৎগুণ এই যে, পাঁচ সাত পারাগ্রাফেই সম্পূর্ণ।

 এ গল্পটা যে পুরাতন তাহাও তোমাদের মনে হইতেছে না? তাহার কারণ পৃথিবীর ভাগ্যদোষে এ গল্প অতি পুরাতন হইয়াও চিরকাল নুতন রহিয়া গেল। বহুদিন হইতেই অকৃতজ্ঞ কাঠঠোকরা পৃথিবীর দৃঢ় কঠিন অমর মহত্ত্বের উপর ঠক্ঠক্ শব্দে চক্ষুপাত করিতেছে এবং কাদাখোঁচা পৃথিবীর সরস