পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবিত ও মৃত।
২৯

⅓স্বহস্তে নূতন মূর্ত্তি দিয়া নিজের ব্যবহারযােগ্য একটি সামগ্রী গড়িয়া তােলে—যদি দুইয়ের কোনটাই না পারে তবে তাহার উপর ভারি রাগ করিতে থাকে।

 কাদম্বিনী যতই দুর্ব্বোধ হইয়া উঠিল যােগমায়া তাহার উপর ততই রাগ করিতে লাগিল, ভাবিল, এ কি উপদ্রব স্কন্ধের উপর চাপিল?

 আবার আর এক বিপদ। কাদম্বিনীর আপনাকে আপনি ভয় করে। সে নিজের কাছ হইতে নিজে কিছুতেই পলাইতে পারে না। যাহাদের ভূতের ভয় আছে তাহারা আপনার পশ্চাদ্দিক্‌কে ভয় করে—যেখানে দৃষ্টি রাখিতে পারে না সেইখানেই ভয়। কিন্তু, কাদম্বিনীর আপনার মধ্যেই সর্ব্বাপেক্ষা বেশি ভয়―বাহিরে তার ভয় নাই।

 এই জন্য বিজন দ্বিপ্রহরে সে একা ঘরে এক এক দিন চীৎকার করিয়া উঠিত—এবং সন্ধ্যাবেলায় দীপালােকে আপনার ছায়া দেখিলে তাহার গা ছম্-ছম্ করিতে থাকিত।

 তাহার এই ভয় দেখিয়া বাড়িসুদ্ধ লােকের মনে কেমন একটা ভয় জন্মিয়া গেল। চাকরদাসীরা এবং যােগমায়াও যখন তখন যেখানে সেখানে ভূত দেখিতে আরম্ভ করিল।

 একদিন এমন হইল, কাদম্বিনী অর্দ্ধরাত্রে আপন শয়নগৃহ হইতে কাঁদিয়া বাহির হইয়া একেবারে যােগমায়ার গৃহদ্বারে আসিয়া কহিল—“দিদি, দিদি, তােমাদের দুটি পায়ে পড়ি গাে! আমাকে এক্‌লা ফেলিয়া রাখিয়াে না।”