পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
বিচিত্র গল্প।

 যােগমায়ার যেমন ভয়ও পাইল, তেমনি রাগও হইল। ইচ্ছা করিল তদণ্ডেই কাদম্বিনীকে দূর করিয়া দেয়। দয়াপরবশ শ্রীপতি অনেক চেষ্টায় তাহাকে ঠাণ্ডা করিয়া পার্শ্ববর্ত্তী গৃহে স্থান দিল।

 পরদিন অসময়ে অন্তঃপুরে শ্রীপতির তলব হইল। যােগমায়া তাহাকে অকস্মাৎ ভর্ৎসনা করিতে আরম্ভ করিল— “হাঁ গা, তুমি কেমনধারা লােক! একজন মেয়েমানুষ আপন শ্বশুরঘর ছাড়িয়া তােমার ঘরে আসিয়া অধিষ্ঠান হইল মাসখানেক হইয়া গেল তবু যাইবার নাম করে না, আর তােমার মুখে যে একটি আপত্তি মাত্র শুনি না! তােমার মনের ভাবটা কি বুঝাইয়া বল দেখি। তােমরা পুরুষ মানুষ এমনি জাতই বটে!”

 বাস্তবিক সাধারণ স্ত্রীজাতির পরে পুরুষ মানুষের একটা নির্ব্বিচার পক্ষপাত আছে, এবং সে জন্য স্ত্রীলােকেরাই তাহাদিগকে অধিক অপরাধী করে। নিঃসহায় অথচ সুন্দরী কাদম্বিনীর প্রতি শ্রীপতির করুণা যে, যথােচিত মাত্রার চেয়ে কিঞ্চিৎ অধিক ছিল তাহার বিরুদ্ধে তিনি যােগমায়ার গাত্র স্পর্শপূর্ব্বক শপথ করিতে উদ্যত হইলেও তাহার ব্যবহারে তাঁহার প্রমাণ পাওয়া যাইত না।

 তিনি মনে করিতেন নিশ্চয়ই শ্বশুরবাড়ির লােকেরা এই পুত্রহীনা বিধবার প্রতি অন্যায় অত্যাচার করিত তাই নিতান্ত সহ্য করিতে না পারিয়া পলাইয়া কাদম্বিনী আমার আশ্রয়