কাদম্বিনী ধীরে ধীরে কহিল—“আমি কি তােমাদের কেহ? আমি কি এ পৃথিবীর? তােমরা হাসিতেছ, কাঁদিতেছ, ভালবাসিতেছ, সবাই আপন আপন লইয়া আছ, আমি ত কেবল চাহিয়া আছি! তােমরা মানুষ, আর আমি ছায়া! বুঝিতে পারি না, ভগবান আমাকে তােমাদের এই সংসারের মাঝখানে কেন রাখিয়াছেন!”
এম্নি ভাবে চাহিয়া কথাগুলা বলিয়া গেল, যে, যােগমায়া কেমন একরকম করিয়া মােটের উপর একটা কি বুঝিতে পারিল কিন্তু আসল কথাটা বুঝিল না, জবাবও দিতে পারিল না, দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করিতেও পারিল না। অত্যন্ত ভারগ্রস্ত গম্ভীর ভাবে চলিয়া গেল।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।



রাত্রি প্রায় যখন দশটা তখন শ্রীপতি রাণীহাট হইতে ফিরিয়া আসিলেন। মুষলধারে বৃষ্টিতে পৃথিবী ভাসিয়া যাইতেছে। ক্রমাগতই তাহার ঝর্ ঝর্ শব্দে মনে হইতেছে বৃষ্টির শেষ নাই, আজ রাত্রিরও শেষ নাই।
যােগমায়া জিজ্ঞাসা করিলেন “কি হইল!”
শ্রীপতি কহিলেন “সে অনেক কথা। পরে হইবে।” বলিয়া কাপড় ছাড়িয়া আহার করিলেন। এবং তামাক খাইয়া শুইতে গেলেন। ভাবটা অত্যন্ত চিন্তিত।