পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিত্র গল্প
৩৭

একবার খোকাকে চক্ষে দেখিয়া যাইবার ইচ্ছা। তাহার পর কোথায় যাইবে কি হইবে, সে কথা সে ভাবেও নাই।

 দীপালোকে দেখিল রুগ্ন শীর্ণ খোকা হাত মুঠা করিয়া ঘুমাইয়া আছে। দেখিয়া উত্তপ্ত হৃদয় যেন তৃষাতুর হইয়া উঠিল—তাহার সমস্ত বালাই লইয়া তাহাকে একবার বুকে চাপিয়া ধরিলে কি বাঁচা যায়! আর, তাহার পর মনে পড়িল, আমি নাই, ইহাকে দেখিবার কে আছে! ইহার মা সঙ্গ ভালবাসে, গল্প ভালবাসে, খেলা ভালবাসে, এতদিন আমার হাতে ভার দিয়াই সে নিশ্চিন্ত ছিল, কখন তাহাকে ছেলে মানুষ করিবার কোন দায় পোহাইতে হয় নাই। আজ ইহাকে কে তেমন করিয়া যত্ন করিবে!—

 এমন সময়ে খোকা হঠাৎ পাশ ফিরিয়া অর্দ্ধনিদ্রিত অবস্থায় বলিয়া উঠিল—“কাকীমা, জল দে!”—আ মরিয়া যাই! সোনা আমার, তোর কাকীমাকে এখনো ভুলিস্ নাই। তাড়াতাড়ি কুঁজা হইতে জল গড়াইয়া লইয়া থোকাকে বুকের উপর তুলিয়া কাদম্বিনী তাহাকে জল পান করাইল।

 যতক্ষণ ঘুমের ঘোর ছিল, চিরাভ্যাসমত কাকীমার হাত হইতে জল খাইতে থোকার-কিছুই আশ্চর্য্য বোধ হইল না। অবশেষে কাদম্বিনী যখন বহুকালের আকাঙ্ক্ষা মিটাইয়া তাহার মুখচুম্বন করিয়া তাহাকে আবার শুয়াইয়া দিল, তখন তাহার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল, এবং কাকীমাকে জড়াইয়া ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কাকীমা, তুই মরে’ গিয়েছিলি?”