বৃদ্ধ সস্নেহে ফকিরের শ্মশ্রুল মুখে দুই একবার হাত বুলাইয়া লইল, এবং প্রকাশ্যে কহিল “বাবা, মাখন!”
বলা বাহুল্য বৃদ্ধের নাম যষ্ঠিচরণ।
ফকির। (সবিস্ময়ে) মাখন! আমার নাম ত মাখন নয়। পূর্ব্বে আমার নাম যাই থাক্, এখন আমার নাম চিদানন্দ স্বামী। ইচ্ছা হয় ত পরমানন্দও বলতে পার।
যষ্ঠি। বাবা, তা এখন আপনাকে চিঁড়েই বল আর পরমান্নই বল, তুই যে আমার মাখন, বাবা সে ত আমি ভুলতে পারব না!—বাবা, তুই কোন্ দুঃখে সংসার ছেড়ে গেলি! তোর কিসের অভাব! দুই স্ত্রী; বড়টিকে না ভাল বাসিস্ ছোটটি আছে। ছেলে পিলের দুঃখও নেই। শত্রুর মুইে ছাই দিয়ে সাতটি কন্যে, একটি ছেলে। আর আমি বুড়ো বাপ ক’দিনই বা বাঁচব, তোর সংসার তোরই থাক্বে!
ফকির একেবারে আঁৎকিয়া উঠিয়া কহিল “কি সর্ব্বনাশ! শুনলেও যে ভয় হয়!”
এতক্ষণে প্রকৃত ব্যাপারটা বোধগম্য হইল। ভাবিল, মন্দ কি, দিন দুই বৃদ্ধের পুত্রভাবেই এখানে লুকাইয়া থাকা যাক্, তাহার পরে সন্ধানে অকৃতকার্য্য হইয়া বাপ চলিয়া গেলেই এখান হইতে পলায়ন করিব।
ফকিরের নিরুত্তর দেখিয়া বৃদ্ধের মনে আর সংশয় রহিল না। কেষ্টা চাকরকে ডাকিয়া বলিল “ওরে ও কেষ্টা, তুই সকলকে খবর দিয়ে আয়গে, আমার মাখন ফিরে এসেছে।”