পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুক্তির উপায়।
৪৯

যায় না—কারণ ফকির একেবারে বাক্শক্তিরহিত হইয়া নতশিরে দাঁড়াইয়া ছিল। এমন সময় অত্যন্ত কোলাহল শুনিয়া এবং পথে লোক জমিতে দেখিয়া ষষ্ঠিচরণ প্রবেশ করিল।

 বলিল “এত দিন আমার ঘর নিস্তব্ধ ছিল, একেবারে টুঁশব্দ ছিল না! আজ মনে হচ্চে বটে আবার মাখন ফিরে এসেচে!”

 ফকির করযোড়ে কহিল “মশায়, আপনার পুত্রবধূদের হাত থেকে আমাকে রক্ষে করুন!”

 ষষ্ঠি। বাবা, অনেক দিন পরে এসেছ তাই প্রথমটা একটু অসহ্য বোধ হচ্চে। তা, মা, তোমরা এখন যাও! বাবা মাখন ত এখন এখানেই রইলেন; ওঁকে আর কিছুতেই যেতে দিচ্চি নে।

 ললনাদ্বয় বিদায় হইলে ফকির যষ্ঠিচরণকে বলিল “মশায়, আপনার পুত্র কেন যে সংসার ত্যাগ করে’ গেছেন তা আমি সম্পূর্ণ অনুভব করতে পারচি। মশায় আমার প্রণাম জান‍্বেন, আমি চল্লেম।”

 বৃদ্ধ এম্‌নি উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন উত্থাপন করিল যে পাড়ার লোক মনে করিল মাখন তাহার বাপকে মারিয়াছে। তাহারা হাঁ হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিল। সকলে আসিয়া ফকিরকে জানাইয়া দিল এমন ভণ্ডতপস্বিগিরি এখানে খাটিবে না। ভালমানুষের ছেলের মত কাল কাটাইতে হইবে। একজন বলিল “ইনি ত পরমহংস নন্ পরম বক।”