পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুক্তির উপায়।
৫৩

ফকির শিশুজাতির প্রতি তিলমাত্র অনুরক্ত ছিল না, তাহা দিগকে তিনি কীট পতঙ্গের ন্যায় দেহ হইতে দূরে রাখিতে ইচ্ছা করিতেন। সম্প্রতি তিনি অহরহ শিশুপঙ্গপালে আচ্ছন্ন হইয়া বর্জ্জইস্ অক্ষরের ছোট বড় নোটের দ্বারা আদ্যোপান্ত সমাকীর্ণ ঐতিহাসিক প্রবন্ধের ন্যায় শোভমান হইলেন। তাহাদের মধ্যে বয়সের বিস্তর তারতম্য ছিল, এবং তাহারা সকলেই কিছু তাঁহার সহিত বয়ঃপ্রাপ্ত সভ্যজনোচিত ব্যবহার করিত না; শুদ্ধশুচি ফকিরের চক্ষে অনেক সময় অশ্রুর সঞ্চার হইত এবং তাহা আনন্দাশ্রু নহে।

 পরের ছেলেরা যখন নানা সুরে তাঁহাকে বাবা বাবা করিয়া ডাকিয়া আদর করিত, তখন তাঁহার সাংঘাতিক পাশবশক্তি প্রয়োগ করিবার একান্ত ইচ্ছা হইত কিন্তু ভয়ে পারিতেন না। মুখ চক্ষু বিকৃত করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতেন।

অবশেষে ফকির মহা চেঁচামেচি করিয়া বলিতে লাগিল, “আমি যাবই, দেখি আমাকে কে আটক করিতে পারে!”

 তখন গ্রামের লোক এক উকীল আনিয়া উপস্থিত করিল। উকীল আসিয়া কহিল “জানেন আপনার দুই স্ত্রী।”

 ফকির। আজ্ঞে এখানে এসে প্রথম জান‍্লুম।

 উকীল। আর আপনার সাত মেয়ে এক ছেলে, তার মধ্যে দুটি মেয়ে বিবাহযোগ্যা।