পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুক্তির উপায়।
৫৫

 ফকির অন্য উপায় না দেখিয়া ইতিমধ্যে নিজের পিতাকে একখানা চিঠি লিখিয়া সমস্ত অবস্থা নিবেদন করিয়াছিল। সেই পত্র পাইয়া ফকিরের পিতা হরিচরণ বাবু আসিয়া উপস্থিত। কিন্তু, পাড়ার লোক, জমিদার এবং উকীল কিছু তেই দখল ছাড়ে না!

 এ লোকটি যে ফকির নহে মাখন, তাহারা তাহার সহস্র অকাট্য প্রমাণ প্রয়োগ করিল—এমন কি, যে ধাত্রী মাখনকে মানুষ করিয়াছিল সেই বুড়ীকে আনিয়া হাজির করিল। সে কম্পিত হস্তে ফকিরের চিবুক তুলিয়া ধরিয়া মুখ নিরীক্ষণ করিয়া তাহার দাড়ির উপরে দরবিগলিত ধারায় অশ্রুপাত করিতে লাগিল।

 যখন দেখিল, তাহাতেও ফকির রাশ মানে না, তখন ঘোমটা টানিয়া দুই স্ত্রী আসিয়া উপস্থিত হইল। পাড়ার লোকেরা শশব্যস্ত হইয়া ঘরের বাহিরে চলিয়া গেল। কেবল দুই বাপ, ফকির, এবং শিশুরা ঘরে রহিল।

 দুই স্ত্রী হাত নাড়িয়া নাড়িয়া ফকিরকে জিজ্ঞাসা করিল “কোন্ চুলোয় যমের কোন্ দুয়োরে যাবার ইচ্ছে হয়েছে?”

 ফকির তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলিতে পারিল না সুতরাং নিরুত্তর হইয়া রহিল। কিন্তু ভাবে যেরূপ প্রকাশ পাইল তাহাতে যমের কোন বিশেষ দ্বারের প্রতি তাহার যে বিশেষ পক্ষপাত আছে এরূপ বোধ হইল না; আপাততঃ যে কোন একটা দ্বার পাইলেই সে বাঁচে, কেবল একবার বাহিরিতে পরিলেই হয়।