তাহা অতিক্রম করিয়াও থম্থম্ করিতেছে, একটি কথা কহিতে পারিতেছে না। এই নিস্তব্ধ ব্যাকুল প্রকৃতির প্রান্তে একটি নিস্তব্ধ ব্যাকুল বালিকা দাঁড়াইয়া।
এদিকে কন্যাভারগ্রস্ত পিতামাতা চিন্তিত হইয়া উঠিয়াছে। লোকেও নিন্দা আরম্ভ করিয়াছে। এমন কি, একঘরে করিবে এমন জনরবও শুনা যায়। বাণীকণ্ঠের স্বচ্ছল অবস্থা, দুই বেলাই মাছ ভাত খায়, এজন্য তাহার শত্রু ছিল।
স্ত্রীপুরুষে বিস্তর পরামর্শ হইল। কিছুদিনের মত বাণী বিদেশে গেল।
অবশেষে ফিরিয়া আসিয়া কহিল “চল, কলিকাতায় চল।”
বিদেশযাত্রার উদ্যোগ হইতে লাগিল। কুয়াশা-ঢাকা প্রভাতের মত সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে একেবারে ভরিয়া গেল। একটা অনির্দ্দিষ্ট আশঙ্কাবশে সে কিছুদিন হইতে ক্রমাগত নির্ব্বাক জন্তুর মত তাহার বাপমায়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিরিত—ডাগর চক্ষু মেলিয়া তাঁহাদের মুখের দিকে চাহিয়া কি একটা বুঝিতে চেষ্টা করিত, কিন্তু তাঁহারা কিছু বুঝাইয়া বলিতেন না।
ইতিমধ্যে একদিন অপরাহ্ণে জলে ছিপ্ ফেলিয়া প্রতাপ হাসিয়া কহিল, “কিরে, সু, তোর না কি বর পাওয়া গেছে, তুই বিয়ে কর্তে যাচ্চিস্? দেখিস্ আমাদের ভুলিস্ নে।” বলিয়া আবার মাছের দিকে মনোযোগ করিল।