রাজীব অবস্থা বুঝিয়া তাড়াতাড়ি কহিল—“আমি কালই এদেশ হইতে চলিয়া যাইতেছি।”
মহামায়া প্রথমে মনে করিয়াছিল যে, ভাবটা দেখাইবে— সে খবরে আমার কি আবশ্যক! কিন্তু পারিল না। পা তুলিতে গিয়া পা উঠিল না—শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করিল “কেন?”
রাজীব কহিল, আমার সাহেব এখান হইতে সোনাপুরের কুঠিতে বদ্লি হইতেছেন, আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইতেছেন।
মহামায়া আবার অনেকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। ভাবিয়া দেখিল দুই জনের জীবনের গতি দুই দিকে—একটা মানুষকে চিরদিন নজরবন্দী করিয়া রাখা যায় না। তাই চাপা ঠোঁট ঈষৎ খুলিয়া কহিল—“আচ্ছা!” সেটা কতকটা গভীর দীর্ঘ নিশ্বাসের মত শুনাইল।
কেবল এই কথাটুকু বলিয়া মহামায়া পুনশ্চ গমনোদ্যত হইতেছে—এমন সময় রাজীব চমকিয়া উঠিয়া কহিল—“চাটুয্যে মহাশয়!”
মহামায়া দেখিল, ভবানীচরণ মন্দিরের অভিমুখে আসিতেছে, বুঝিল তাহাদের সন্ধান পাইয়াছে। রাজীব মহামায়ার বিপদের সম্ভাবনা দেখিয়া মন্দিরের ভগ্নভিত্তি দিয়া লাফাইয়া বাহির হইবার চেষ্টা করিল। মহামায়া সবলে তাহার হাত ধরিয়া আটক করিয়া রাখিল। ভবানীচরণ মন্দিরে প্রবেশ করিলেন—কেবল একবার নীরবে নিস্তব্ধভাবে উভয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন।