পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯০
বিচিত্র প্রবন্ধ

বেসুরের মতো বাজিতে থাকে না। পাঁজিতে তিথিবিশেষে বেগুন, শিম, কুষ্মাণ্ড নিষিদ্ধ আছে—আরো কতকগুলি নিষেধ থাকা দরকার,–কোন্ ঋতুতে খবরের কাগজ পড়া অবৈধ, কোন ঋতুতে আপিস্‌ কামাই না করা মহাপাতক, অরসিকের নিজবুদ্ধির উপর তাহা নির্ণয় করিবার ভার না দিয়া শাস্ত্রকারদের তাহা একেবারে বাঁধিয়া দেওয়া উচিত।

 বসন্তের দিনে যে বিরহিণীর প্রাণ হাহা করে, এ কথা আমরা প্রাচীন কাব্যেই পড়িয়াছি—এখন এ কথা লিখিতে আমাদের সঙ্কোচ বোধ হয়, পাছে লোকে হাসে। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের মনের সম্পর্ক আমরা এম্‌নি করিয়াই ছেদন করিয়াছি। বসন্তে সমস্ত বনে-উপবনে ফুল ফুটিবার সময় উপস্থিত হয়—তখন তাহাদের প্রাণের অজস্রতা, বিকাশের উৎসব। তখন আত্মদানের উচ্ছ্বাসে তরুলতা পাগল হইয়া উঠে—তখন তাহাদের হিসাবের বোধমাত্র থাকে না; যেখানে দুটো ফল ধরিবে, সেখানে পঁচিশটা মুকুল ধরাইয়া বসে। মানুষই কি কেবল এই অজস্বতার স্রোত রোধ করিবে? সে আপনাকে টাইবে না, ফলাইবে না, দান করিতে চাহিবে না, কেবলি কি ঘর নিকাইবে, বাসন মাজিবেও যাহাদের সে বালাই নাই, তাহারা বেলা চারটে পর্য্যন্ত পশমের গলাবন্ধ বুনিবে? আমরা কি এতই একান্ত মানুষ? আমরা কি বসন্তের নিগূঢ় রসসঞ্চার-বিকশিত তরুলতাপুষ্পপল্লবের কেহই নই? তাহারা যে আমাদের ঘরের আঙিনাকে ছায়ায় ঢাকিয়া, গন্ধে ভরিয়া, বাহু দিয়া ঘেরিয়া দাঁড়াইয়া আছে; তাহারা কি আমাদের এতই পর যে, তাহারা যখন ফুলে ফুটিয়া উঠিবে, আমরা তখন চাপকান পরিয়া আপিসে যাইব—কোনো অনির্ব্বচনীয় বেদনায় আমাদের হৃৎপিণ্ড তরুপল্লবের মতো কাঁপিয়া উঠিবে না?

 আমি তো আজ গাছপালার সঙ্গে বহু প্রাচীনকালের আত্মীয়তা স্বীকার করিব। ব্যস্ত হইয়া কাজ করিয়া বেড়ানোই যে জীবনের অদ্বিতীয়