পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০২
বিচিত্র প্রবন্ধ

খামখা তিনিই আনিয়া উপস্থিত করেন। তিনি কেন্দ্রাতিগ, “সেণ্ট্রিফুগল্‌”—তিনি কেবলি নিখিলকে নিয়মের বাহিয়ের দিকে টালিতেছেন। নিয়মের দেবতা সংসারের সমস্ত পথকে পরিপূর্ণ চক্রপথ করিয়া তুলিবার চেষ্টা করিতেছেন, আর এই পাগল তাহাকে আক্ষিপ্ত করিয়া কুণ্ডলী আকার করিয়া তুলিতেছেন। এই পাগল আপনার খেয়ালে সরীসৃপের বংশে পাখী এবং বানরের বংশে মানুষ উদ্ভাবিত করিতেছেন। যাহা হইয়াছে, যাহা আছে, তাহাকেই চিরস্থায়িরূপে রক্ষা করিবার জন্য সংসারের একটা বিষম চেষ্টা রহিয়াছে—ইনি সেটাকে ছারখার করিয়া-দিয়া, যাহা নাই, তাহারই জন্য পথ করিয়া দিতেছেন। ইহার হাতে বাঁশি নাই, সামঞ্জস্য সুর ইহার নহে, পিনাক ঝঙ্কৃত হয়, বিধিবিহিত যজ্ঞ নষ্ট হইয়া যায়, এবং কোথা হইতে একটি অপূর্ব্বতা উড়িয়া-আসিয়া জুড়িয়া বসে। পাগলও ইহারি কীর্তি এবং প্রতিভাও ইহারি কীর্তি। ইহার টানে যাহার তার ছিঁঁড়িয়া যায়, সে হয় উন্মাদ আর যাহার তার অশ্রুতপূর্ব সুরে বাজিয়া উঠে, সে হইল প্রতিভাবান্। পাগলও দশের বাহিরে, প্রতিভাবানও তাই—কিন্তু পাগল বাহিরেই থাকিয়া যায়, আর প্রতিভাবান দশকে একাদশের কোঠায় টানিয়া আনিয়া দশের অধিকার বাড়াইয়া দেন।

 শুধু পাগল নয়, শুধু প্রতিভাবান্ নয়, আমাদের প্রতিদিনের একরঙা সুতার মধ্যে হঠাৎ ভয়ঙ্কর, তাহার জ্বলজ্জটাকলাপ লইয়া দেখা দেয়। সেই ভয়ঙ্কর, প্রকৃতির মধ্যে একটা অপ্রত্যাশিত উৎপাত, মানুষের মধ্যে একটা অসাধারণ পাপ আকারে জাগিয়া উঠে। তখন কত সুখমিলনের জাল লণ্ডভণ্ড, কত হৃদয়ের সম্বন্ধ ছারখার হইয়া যায়! হে রুদ্র, তোমার ললাটের যে ধকধক অগ্নিশিখার স্ফুলিঙ্গমাত্রে অন্ধকারে গৃহের প্রদীপ জ্বলিয়া উঠে-সেই শিখাতেই লোকালয়ে সহস্রের হাহাধ্বনিতে নিশীথ-রাত্রে গৃহদাহ উপস্থিত হয়। হায়, শম্ভু,