পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪৬
বিচিত্র প্রবন্ধ

ভালো। আমি প্রগল্‌ভ, কিন্তু যারা চুপ করতে জানে তাদের শ্রদ্ধা করি। যে-মনটা কথায় কথায় চেঁচিয়ে কথা কয় তাকে আমি এখানকার নির্ম্মল আকাশের নিচে গাছতলায় ব’সে চুপ করাতে চেষ্টা করছি। এই চুপের মধ্যে শান্তি পাওয়া যায়, সত্যও পাওয়া যায়। প্রত্যেক নূতন অবস্থার সঙ্গে জীবনকে খাপ খাওয়াতে গিয়ে নানা জায়গায় ঘা লাগে—তখনকার মতো সেগুলো প্রচণ্ড—নতুন চলতে গিয়ে শিশুদের প’ড়ে যাওয়ার মতো—তা নিয়ে আহা উহু করতে গেলেই ছেলেদের কাঁদিয়ে ভোলা হয়—বুদ্ধি যার আছে সে এমন জায়গায় চুপ ক’রে যায়—কেননা সব-কিছুকেই মনে-রাখা মনের শ্রেষ্ঠ শক্তি নয়, ভোলবার, জিনিষকে ভুলতে দেওয়াতেও তার শক্তির পরিচয়।


শান্তিনিকেতন
২৫ মাঘ, ১৩৩৩

 আমার চিঠি লেখার বয়স চলে গেছে—এখন দু’লাইন চিঠি লেখার চেয়ে গাড়ি ভাড়া ক’রে বাড়িতে গিয়ে বলে আসা অনেক সহজ বোধ হয়। কলমের ভিতর দিয়ে কথা কইতে গেলে কথার প্রাণগত অনেকটা অংশ এদিক ওদিক দিয়ে ফ’সকে যায়—যখন মনের শক্তি প্রচুর থাকে তখন বাদ সাদ দিয়েও যথেষ্ট উদ্বৃত্ত থাকে—তাই তখন লেখার বকুনিতে অভাবের লক্ষণ দেখা যায় না। এখন বাণী সহজে বকুনিতে উছ্‌লে উঠতে বাধা পায়—তাই কলমের ডগায় কথার ধারা ক্ষীণ হয়ে আসে, বোধ হয় এইজন্যেই লেখবার দুঃখ স্বীকার করতে মন রাজি হয় না।

 তা হোক্‌ গে, তবু তোমাকে কিছু বলা যাক। কোনো ঘটনার বিবরণ নয়, নিছক ভিতরের কথা। অন্তর অন্তরীক্ষের মেঘ ও রৌদ্রের