পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৪৭

লীলা। সময় অনুকূল নয়, নানা চিন্তা, নানা অভাব, নানা আঘাত সংঘাত। ক্ষণে ক্ষণে, ভিতরে ভিতরে অবসাদের ছায়া ঘনিয়ে আসে, একটা পীড়ার হাওয়া মনের একদিক থেকে আর-একদিকে হুহু ক’রে বইতে থাকে। এমন সময় চ’মকে উঠে’ মনে পড়ে যায় যে এ ছায়াটা “আমি” ব’লে একটা রাহুর। সে রাহুটা সত্য পদার্থ নয়। তখন মনটা ধড়ফড় ক’রে চেঁচিয়ে উঠে’ ব’লে ওঠে-ও নেই ও নেই। দেখতে দেখতে মন পরিস্কার হয়ে যায়। বাড়ির সামনের কাঁকর-বিছানো লাল রাস্তায় বেড়াই আর মনের মধ্যে এই ছায়া-আলোর দ্বন্দ্ব চলে। বাইরে থেকে যারা দেখে তার। কে জানবে ভিতরে একটা সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে। এ সৃষ্টির কি আমারই মনের মধ্যে আরম্ভ আমারই মনের মধ্যে অবসান? বিশ্বসৃষ্টির সঙ্গে এর কি কোনো চিরন্তন যোগসূত্র নেই? নিশ্চয়ই আছে। জগৎ জুড়ে’ অসীম কাল ধ’রে একটা কী হয়ে উঠছে, আমাদের চিত্তের মধ্যে বেদনায় বেদনায় তারি একটা ধাক্কা চল্‌ছে। ব্যক্তিগত জীবনে সুখ দুঃখ লাভ ক্ষতি বিচ্ছেদ মিলন নিয়ে যে সব বিশেষ ঘটনার ধারা বয়ে চলে গেল কয়েক বছর পরে কোথাও তার কোনো চিহ্নই থাকবে না-ঝঞ্চামথিত সমুদ্রের ‘পরে ফেনাগুলোর যেমন কোনো চিহ্নই পাওয়া যায় না। তরুণ পৃথিবীতে আগুন জল হাওয়ার যে প্রচণ্ড তাণ্ডবলীলা চলেছিল সে নৃত্যলীলার নাট্যমঞ্চ আজ একেবারেই নেই—কিন্তু সেই নৃত্যলীলারই চরণ পাতে আজকেকার পৃথিবীর প্রাণনিকেতন তৈরি হয়ে উঠেছে—সৃষ্টির উপকরণ ও প্রকরণ বদল হোলো কিন্তু সৃষ্টি রইল। মনের উপর দিয়ে নানা ঘটনার ধাক্কা নানা অবস্থার আলোড়ন তুফান তুলে যায় আজ বাদে কাল তা’রা থাকে না কিন্তু সেই ধাক্কায় যেখানেই এই “আমির” ঘন আবরণ ছিন্ন হয়ে যায় সেইখানেই সত্যের কোনো একটা চিরন্তন রূপসৃষ্টির প্রকাশ হোতে থাকে—আমি তার উপলক্ষ্য মাত্র। সভ্যতার ইতিহাসধারায় মানুষ আজ