পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪৮
বিচিত্র প্রবন্ধ

যে অবস্থার মধ্যে এসে উত্তীর্ণ হয়েছে—এই অবস্থাসৃষ্টির প্রক্রিয়ার মধ্যে কত কোটি কোটি নামহীন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের চিরবিস্মৃত চিত্তসংঘাত আছে। সৃষ্টির যা-কিছু রয়ে-যাওয়া তা সংখ্যাহীন চলে-যাওয়ার প্রতিমুহূর্ত্তের হাতের গড়া। আজ আমার এই জীবনের মধ্যে সৃষ্টির সেই দূতগুলি, সেই চলে-যাওয়ার দল তার কাজ করছে—“আমি” ব’লে পদার্থটা উপলক্ষ্য মাত্র-বাড়ি তৈরির সময় যে-ভারা বাঁধা হয় তা ভারা মাত্র—আজকের দিনে এর প্রয়োজনীয়তার প্রাধান্য যতই থাক্‌ কালকের দিনে যখন এর চিহ্ন মাত্র থাকবে না তখন কারো গায়ে একটুও বাজবে না। ইমারত আপন ভারার জন্যে কোথাও শোক করে না, তার জন্যে সমাধি-মন্দির স্থাপন করে না। মোদ্দা কথাটা এই যে, আজ আমার এই “আমি”-টাকে নিয়ে যে-গড়া-পেটা চলছে, এই লাল কাঁকর বিছানো রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে ভিতবে ভিতরে যা-কিছু উপলব্ধি করছি তার অনেকখানিই আমার নামের স্বাক্ষর মুছে ফেলে দিয়ে মানুষের সৃষ্টিভাণ্ডারে জমা হচ্ছে। এই কথা মনে রেখে ক্ষণিকের আঘাত বেদনাকে যেন তুচ্ছ করতে পারি। মনে যেন রাখি চিরমানব আমার মধ্যে তপস্যা করছেন-তপস্যার দ্বারাই সৃষ্টি হয়। সেই তপস্যার আগুনে আমার এই “আমি”-ইন্ধন ছাই হয়ে যাক্ না, তাতে ক্ষতি কী? কিন্তু তার অন্তরের দান সবটাই ব্যর্থ হবে না।


শান্তিনিকেতন
৩০ কার্ত্তিক, ১৩৩৪

 আজ সকালে বিচ্ছিন্ন মেঘের মধ্যে দিয়ে চমৎকার সূর্য্যোদয় হয়েছিল, ঈষৎ বাষ্পাবিষ্ট তার সকরুণ আলো এখানকার গাছপালা