পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৫১

উৎসুক হয়ে আকাশে চেয়ে আছে। মেঘের কৃপণতা নেই কিন্তু বাতাস হয়েছে অন্তরায়। যেই বৃষ্টির আয়োজন প্রায় পূর্ণ হয়ে ওঠে অমনি কুমন্ত্রীর মতো প্রতিকূল হাওয়া কী যে কানে মন্ত্র দেয় উপরিওয়ালার সমস্ত পলিসি যায় ব’দ্‌লে। আকাশের পার্লামেণ্টে কয়েকদিন ধ’রে আশা নৈরাশ্যের debate চল্‌ছে—আজ বোধ হচ্চে যেন বাজেট পাস হয়ে গেছে—বর্ষণ হোতে বাধা ঘটবে না। খুব ঝমাঝম যদি বৃষ্টি নামে—তাহোলে চমৎকার লাগবে—এ বৎসরটা আমার কপালে বাদলের সম্ভোগটা মারা গেছে—জোড়াসাঁকোর গলি জলে ভেসে গেছে কিন্তু মনের মধ্যে বর্ষার মৃদঙ্গ নাচের তাল লাগায়নি। এবারকার বর্ষায় গান হলো না—এমন কার্পণ্য আমার বীণায় অনেকদিন ঘটেনি।


শান্তিনিকেতন
১৮ কার্ত্তিক, ১৩৩৫

 বর্ষা, শেষ পর্য্যন্ত তার আকাশের সিংহাসন আঁকড়ে রইল, মাঝে মাঝে দু’চারদিন ফাঁক পড়েছে—হোলির রাত্রে হিন্দুস্থানীর দল ক্ষণকালের জন্য যেমন তাদের মাদোল পিটুনিতে ক্ষান্ত দেয়, সেই রকম, তারপরেই আবার দ্বিগুণ উৎসাহে কোলাহল সুরু করে। এমনি করতে করতে শরতের মেয়াদ ফুরিয়ে গেল-হেমন্ত এসে হাজির। ধরাতলে শিউলি মালতী বর্ষার অভ্যর্থনার আয়োজন যথেষ্ট করেছে, কিন্তু আকাশতলে দেবতা পথ আট্‌কে ছিলেন। শীতের বাতাস সুরু হয়েছে, গায়ে গরম কাপড় চড়িয়েছি। ভালোই লাগ্‌ছে—বিশেষত বেলা দশটার পর থেকে প্রান্তরের উপর যখন পৃথিবীর রোদ পোহাবার সময় আসে-নির্ম্মল