পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৫৭

ইচ্ছাকে সম্পূর্ণ পথ ছেড়ে দিয়ে যেন একেবারেই সরে দাঁড়ায়। নইলে কালের পথ রোধ করতে চেষ্টা করলে তার দুর্গতি ঘটতে বাধ্য। টাকার জোরে আমরা আমাদের ধ্যানের রূপটাকে বেঁধে দিয়ে যেতে ইচ্ছা করি। তার মধ্যে অন্য পাঁচজনের ধ্যান যখন প্রবেশ করতে চেষ্টা করে তখন সেটা বেখাপ হোতেই হবে। আমার উচিত ছিল বিশ্বভারতীর সম্পূর্ণতা সাধনের জন্যে বিশ্বভারতীর শেষ টাকা ফুঁকে দিয়ে চলে যাওয়া। তারপরে নতুন কাল নিজের সম্বল ও সাধনা নিয়ে নিজের ধ্যানমন্দির পাকা করুক। আমার সঙ্গে যদি মেলে তো ভালো যদি না মেলে তো সেও ভালো। কিন্তু এটা যেন ধার-করা জিনিষ না হয়। প্রাণের জিনিষে ধার চলে না—অর্থাৎ তাতে প্রাণবান কাজ হয় না—আমগাছ নিয়ে তক্তপোষ করা চলে কিন্তু কাঁঠালব্যবসায়ী তা নিয়ে কাঁঠাল ফলাতে চেষ্টা যেন না করে, এর ভিতরকার কথাটা হচ্চে ‘মা গৃধঃ’।

 আমি যে কথাটা বলতে বসেছিলুম সেটা এ নয়। তোমরা তাঁবুতে থাক্‌বে কিম্বা নৌকোতে থাক্‌বে সে পরামর্শ দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমার হাল খবরটা হচ্ছে এই যে, কাল যখন জাহাজে চড়েছিলুম তখন মনটা তার নতুন দেহ না পেয়ে থেকে-থেকে ডাঙা আঁকড়ে ধরছিল কিন্তু তাহার দেহান্তর প্রাপ্তি ঘটেছে। তবুও নতুন দেহ সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে কিছু দিন লাগে, কিন্তু খুব সম্ভব কাল থেকেই লেক্‌চার লিখতে বসতে পারব। সেটাকে বলা যেতে পারে সম্পূর্ণ নতুন ঘরকন্না পাতানো। যে পার ছেড়ে এলুম সে পাড়ের সঙ্গে এর দাবী দাওয়ার সম্পর্ক নেই। এর ভাষাও স্বতন্ত্র। বাজে কথা গেল। এবার সংবাদ শুন্‌তে চাও। আজ সকাল সাতটা পর্য্যন্ত অত্যন্ত ক্লান্ত ছিলুম। ক্লান্তি যেন অজগর সাপের মতো আমার বুক পিঠ জড়িয়ে ধ’রে চাপ দিচ্ছিল। তারপর থেকে নিজেকে বেশ