পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৫৯

পরিবর্ত্তন ঘটিয়ে আমাদের জগতের বিশেষত্ব ঘটাই। তার মানেই হচ্চে ছন্দ বদল হোলেই রূপের বদল হয়। আমি এবং আমার প্রতিবেশী ইংরেজ এক জায়গায় বাস করি কিন্তু এক জগতে নয়। তার মানে তার জীবনে কালের ছন্দ আমার থেকে স্বতন্ত্র। সেই জন্যেই তার খেলার সঙ্গে আমার খেলার তাল মেলে না। আমি ঠেলা গাড়িতে চল্‌ছি, সে মোটরে চল্‌ছে—আমাদের উভয়ের সময়ের পরিমাণ এক, ছন্দ আলাদা। বস্তুত এক হোলেও ঝাঁপতালে এবং টিমেতেতালায় তার মূল্য সম্পূর্ণ বদ্‌লে দেয়। মানুষে মানুষে সুরের ঐক্য থাক্‌তেও পারে; সব চেয়ে বড়ো অনৈক্য তালের। তালের দ্বারা জীবনের ঘটনাগুলোকে ভাগ করে, সাজায়, বিশেষ বিশেষ জায়গায় ঝোঁক দেয়। একেই বলে সৃষ্টি। জগৎ জুড়ে এই ব্যাপার চল্‌ছে। মহাকালের মৃদঙ্গ এক-এক তাণ্ডব-ক্ষেত্রে এক-এক তালে বাজছে, সেই নৃত্যের রূপেই রূপের অসংখ্য বৈচিত্র্য। আমার জীবনের নটরাজ আমার মধ্যে যে নাচ তুলেছেন, সে আর কোথাও নেই, কোনো জীবনচরিতের পটে এর সম্পূর্ণ ছবি উঠ্‌বে কী ক’রে? কোনো কালেই উঠ্‌বে না। আমাদের আটিষ্ট যা গড়েন—তার নব নব সংস্করণ ঘট্‌তে দেন না, সাজানো টাইপ ভেঙে ফেলেন—অতএব রবীন্দ্রনাথ নিরবধিকালের চয়নিকায় একবার ধরা দেয়, তারপর তাকে ফেলে দেয়—অনন্তকালে আর রবীন্দ্রনাথ নেই। হয়তো পরকালে আর একটা ধারা চল্‌তে পারে, কিন্তু তার এ নাম নয়, এ রূপ নয়, এ পরিবেশ নয়, এ সমাবেশ নয়; সুতরাং রবীন্দ্রনাথের পালা এইখানেই চিরকালের মতো চুকিয়ে দিয়ে চলে যেতে হবে। আর যাই হোক্‌ বিশ্বসভায় কারো মেমোরিয়াল মিটিং হয় না। হয় কেবল আগমনী এবং বিসর্জ্জন। আজ রাত্রে পিনাঙ।