পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিচিত্র প্রবন্ধ

কহিল–“মহাশয়, ভয় করিবেন না, এমন ঢের বার জাহাজ ধরিয়াছি।” বলা বাহুল্য এবারও ধরিল। জাহাজের উপর হইতে একটা সিঁড়ি নামাইয়া দিল। ছেলেদের প্রথমে উঠানো গেল, তাহার পর আমার ভাজ ঠাকুরাণী যখন বহু কষ্টে তাঁহার স্থল-পদ্ম-পা-দুখানি জাহাজের উপর তুলিলেন তখন আমরাও মধুকরের মতো তাহারি পশ্চাতে উপরে উঠিয়া পড়িলাম।


(২)

 যদিও স্রোত এবং বাতাস প্রতিকূলে ছিল, তথাপি আমাদের এই গজবর উর্দ্ধগুণ্ডে বৃংহিতধ্বনি করিতে করিতে গজেন্দ্রগমনের মনোহারিতা উপেক্ষা করিয়া চত্বারিংশ তুরঙ্গ-বেগে ছুটিতে লাগিল। আমরা ছয় জন এবং জাহাজের বৃদ্ধ কর্ত্তাবাবু এই সাত জনে মিলিয়া জাহাজের কামরার সম্মুখে খানিকটা খোলা জায়গায় কেদারা লইয়া বসিলাম। আমাদের মাথার উপরে কেবল একটি ছাত আছে। সম্মুখ হইতে হুহু করিয়া বাতাস আসিয়া কানের কাছে সোঁ সোঁ করিতে লাগিল, জামার মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহাকে অকস্মাৎ ফুলাইয়া তুলিয়া ফর ফর আওয়াজ করিতে থাকিল এবং আমার ভ্রাতৃজায়ার সুদীর্ঘ সুসংযত চুলগুলিকে বার বার অবাধ্যতাচরণে উৎসাহিত করিয়া তুলিল। তাহারা কি জাত-সাপিণীর বংশ, এই নিমিত্ত বিদ্রোহী হইয়া বেণী বন্ধন, এড়াইয়া পূজনীয়া ঠাকুরাণীর নাসাবিবর ও মুখরন্ধ্রের মধ্যে পথ অনুসন্ধান করিতে লাগিল; আবার আর কতকগুলি উর্দ্ধমুখ হইয়া আস্ফালন করিতে করিতে মাথার উপর রীতিমতো নাগলোকের উৎসব বাধাইয়া দিল; কেবল বেণী নামক অজগর সাপটা শত বন্ধনে বদ্ধ হইয়া, শত