করবার জো নেই—আমাদের স্বদেশীকতা সেই পুঁথির বুলি দিয়ে তৈরী— দেশের লোকের ’পরে অনুরাগের উৎসুক্য দিয়ে নয়। আমাদের জগৎটা কত ছোটো ভেবে দেখে—তার থেকে ও জিনিষটাই বাদ পড়েছে।
মেয়েরা ঋতুরঙ্গ অভিনয় করবে আজ সন্ধ্যেবেলায়। ওরা অঙ্গভঙ্গির লতানে রেখা দিয়ে গানের স্বরের উপর নক্সা কাটতে থাকে। এর অর্থটা কী। আমাদের প্রতিদিনটা দাগ-ধরা ছেঁড়া-খোঁড়া, কাটাকুটিতে ভরা, তার মধ্যে এর সঙ্গতি কোথায়? যারা লোকহিত-ব্রতপরায়ণ সন্ন্যাসী তারা বলে বাস্তব সংসারে দুঃখ দৈন্য শ্রীহীনতার অস্ত নেই, তার মধ্যে এই বিলাসের অবতারণা কেন? তারা জানে “দরিদ্র নারায়ণ” তো নাচ শেখেননি, তিনি নানা দায় নিয়ে কেবলি ছট্ফট্ ক’রে বেড়ান, তাতে ছন্দ নেই। এরা এই কথাটা ভুলে যায় যে, দরিদ্র শিবের আনন্দ নাচে। প্রতিদিনের দৈন্যটাই যদি একান্ত সত্য হোত, তাহোলে এই নাচটা আমাদের একেবারেই ভালো লাগত না, এটাকে পাগ্লামি বলতুম। কিন্তু ছন্দের এই সুসম্পূর্ণ রূপলীলাটি যখন দেখি, মন বলতে থাকে এই জিনিষটি অত্যন্ত সত্য—ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অপরিচ্ছন্নভাবে চারিদিকে যা চোখে পড়তে থাকে তার চেয়ে অনেক গভীরভাবে নিবিড়ভাবে। পর্দ্দাটার উপরেই প্রতিদিনের চলতি হাতের ছাপ পড়ছে, দাগ ধরছে, ধূলো লাগছে, পরিপূর্ণতার চেহারাটা কেবলি অপ্রমাণ হচ্চে—একেই বলি বাস্তব।