পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৭৭

তার এই সৃষ্টির অন্তর্গত। আজ মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবন হঠাৎ অত্যন্ত বিপুল হয়ে উঠেছে। তার ফল অত্যন্ত প্রভূত, জিনিষ উৎপন্ন হচ্চে অসংখ্য আকারে অসম্ভব বেগে, সংখ্যায় এবং পরিমাণে, শক্তির দুঃসাধ্যতায় ও কৌশলে মানুষের মনকে অভিভূত করে দিয়েছে। লোভে এবং দুরাকাঙ্ক্ষায় মানুষ আপন প্রাণকে পীড়িত ক’রে মানবসম্বন্ধকে ভেঙে চুরে যন্ত্রকে ও বস্তুকে মনুষ্যত্বের চেয়ে বড়ো ক’রে তুল্‌ছে। তার এই শক্তিমদমত্ততার অবস্থায় যন্ত্রশক্তির প্রকাশকেই সে যদি বলিষ্ঠ ব’লে আস্ফালন করে এবং প্রাণের প্রকাশকে হৃদয়ের প্রকাশকে বলে সেণ্টিমেণ্টাল দুর্ব্বলতা তাহোলে তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার যে, সুন্দর দুর্ব্বলও নয় সবলও নয়, তা সুন্দর, তার শ্রেষ্ঠতা যদি এই ব’লে বিচার করতে চাই যে সে এক সেকেণ্ডে কয়বার চাকা ঘোরাতে পারে কিম্বা তার উৎপাদনের সংখ্যা কত তাহোলে বলব সেটা বর্ব্বরতা। এবং সেই সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে, যন্ত্রের অপরিমিত জটিলতা, তার বিকট আওয়াজ, তার দুরন্তবেগ ও দুম্মুল্য উপকরণ, যাতে ক’রে সে বর্ত্তমান যুগের মনকে ছেলে-ভোলানোর মতো ক’রে ভোলায় সেটাতে তার শক্তির চেয়ে অশক্তিরই পরিচয় বেশি। বৈজ্ঞানিক বুদ্ধির যতই উন্নতি হবে তার হাঁসফাঁসানি ততই কম্‌বে, তার মানুষমার। দৌরাত্ম্য ততই হালকা হয়ে আস্‌বে, তার উপকরণ ততই হবে সহজ। কারখানাঘর কুশ্রী কেননা মানুষের অশক্তিই এখানে উৎকট হয়ে উঠেছে, নিজের শক্তি দিয়ে প্রকৃতির শক্তিকে বাঁধতে গিয়ে বন্ধনটাকেই ক’রে তুলেছে অত্যন্ত জবড়জঙ্গ, সেইটেই তার দুর্ব্বলতা—দুর্ব্বলতা কুশ্রী। যে মানুষ সাঁতার জানে না, সে বিকট রকম হাত পা ছোঁড়াছুড়ি করে, তার আস্ফালনে শিশুর মন ভুলতে পারে কিন্তু যে মানুষ সাঁতার জানে, সমজদার তার সাঁতারের ভঙ্গী দেখে বাহবা দেয়—কেবল যে সেই ভঙ্গী ফলদায়ক তা নয় সেই ভঙ্গী সুশ্রী, তার গতির সুপরিমিত সুঠামতা তার

১২