পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭৮
বিচিত্র প্রবন্ধ

শক্তির উদ্দামতাকে অনায়াসে সংযত করে রাখে। শক্তি বর্ত্তমান যুগের কলকারখানায় দৈত্যের মতো বিকটাকার, কেন না আপন দুর্দ্দামতাকে সে দেবতার মতো সহজে সংযত করতে পারেনি, তাই সে আমাদের ইন্দ্রিয়বোধকে সৌন্দর্যবোধকে মানবসম্বন্ধবোধকে এমন ক’রে পীড়িত করছে। মানুষের কলাবুদ্ধি আনন্দিত হয় দেবতাকে নিয়ে, কলবুদ্ধি দৈত্যকে নিয়ে; এই দৈত্যের সঙ্গে তার লোভ মিতালি করতে পারে কিন্তু তার আনন্দ এর বেদীতে পূজা আনবে না। কলকারখানার প্রয়োজন নেই এমন কথা আমি কখনই বলিনে—কিন্তু সে দাস, পণ্য বিনিময়ের কাজে তাকে পূরো দমে খাটিয়ে নেও কিন্তু তার সঙ্গে হৃদয় বিনিময়ের ভান করতে যাওয়া ছেলেমানুষী।


(২)


 চিঠির একটা অংশের উত্তর দেওয়া হয়নি, সেটুকুও যোগ ক’রে দিই। লিখেছ একটা যুগ আসছে যখন আমরা বিজ্ঞান, economic production নিয়ে কবিতা লিখব। কত ধানে কত চাল হয় এই প্রয়োজনীয় বিষয়টা এতকাল ধ’রে এত গৃহস্থকে আলোচনা করতে হয়েছে তবু কেন আজ পর্য্যন্ত এই প্রসঙ্গ নিয়ে কেউ কবিতা লেখেনি। কিম্বা “ধন্য রাজা পুণ্যদেশ, যদি বর্ষে মাঘের শেষ,” এই ছড়াটাকে কেউ কেউ সাহিত্যে বড়ো জায়গা দেয় নি? মাঘের শেষে বৃষ্টি হোলে চাষীদের উপকার হয় এ তথ্যটা তো “production” তত্ত্বের অন্তর্গত। একস্‌চেঞ্জের বাজার ওঠা নামা নিয়ে দেশজুড়ে সুখদুঃখ তত কম নয়, এ নিয়ে খবরের কাগজে লেখালেখি চলে, কিন্তু ভৈরবীরাগিণীতে আলাপ তো কেউ করে না। মানুষের জীবনের একটা ভাগ আছে যেটা খবর